২০১৫ সালের ফেব্রিয়ারি মাসে বই মেলাতে এসেছে বাংলা ভাষায় লেখা রাগিব হাসানের দুইটি বই। বই এর কিছু অংশ আমরা আমাদের এখানে শেয়ার করা হবে আপনাদের পড়ার জন্যে…হয়তো চট করে একটা অংশ পড়া দরকার, হাতের কাছে বইটি নেই তখন ঘুরে যেতে পারেন এখানে…অনলাইন এ বইটি কেনার সুজোগ ও রয়েছে(দেশে এবং বিদেশে)। বইটি কেনার জন্যেও অনুরোধ থাকলো কারণ তা থেকে লেখকের যথাযোগ্য সন্মান দেয়া হয় আর সেই সাথে ছাপানো বই পড়ার আমেজই আলাদা…সর্বপরি এই লেখাগুলো লেখার একটাই উদ্যেশ্য: লেখক চেয়েছেন যাতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গবেষণা কি এবং কিভাবে করতে হয় তা সহজে শিখতে পারে। সেই উদ্যেশ্যকে সফল করার ইচ্ছা নিয়েই আমাদের এই বিশেষ প্রচেষ্টা।লেখক এবং প্রকাশক উভয়কে আমাদের ধন্যবাদ এই পোস্টগুলো শেয়ার দেয়ার অনুমতি দেয়ার জন্যে।

5

 রাগিব হাসান

জীবনে শেষ বলে কি কিছু আছে? আপনার পিঠ আজ দেয়ালে গেছে ঠেকে, তার মানে কি আগামীকালেও সেটা হবে?

আসুন, একজনার গল্প শুনি।

চীনের সেই গণিতের ছাত্রটির জীবন সরলরেখায় চলেনি। চীনের ভয়াবহ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পাল্লায় পড়ে তার কৈশোর আর তারুণ্যের শুরুটা কেটেছিলো পড়াশোনার বাইরে। অনেক পরে পড়াশোনায় ফেরত এসে মেধাবী ছাত্রটি প্রথমে আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি পেলো গণিতে, অনেক আশা নিয়ে পড়তে গেলো আমেরিকায়। ৯১ সালে আমেরিকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলার একটা — পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে পিএইচডি ডিগ্রিও পেলো।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর পরের কাহিনিটা হয় অনেক কিছু পাবার, বড় চাকুরি গাড়ি বাড়ির। কিন্তু এই ছাত্রটির জীবনে তা হয়নি, দুর্ভাগ্য ছাড়েনি তার পিছু।

গণিত অন্তপ্রাণ এই দুর্ভাগা ছাত্রটি কিছুতেই চাকুরি খুঁজে পায়না। এক পর্যায়ে লাজ লজ্জ্বার মাথা খেয়ে সে নামলো খাবার পৌছে দেয়ার কাছে, চীনা রেস্টুরেন্টের ডেলিভারি ম্যান হিসাবে কাজ করলো অল্প বেতনে। তার পরে সাবওয়ে ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের একেবারে নিম্নবেতনের চাকুরিও করতে হলো, যেটা একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারীর জন্য অভাবনীয়। কিন্তু কী করবে, দুর্ভাগ্য তো তার পিছু ছাড়ে না।

এভাবে কেটে গেলো ৮টি বছর।

অনেক কষ্টে ৪৪ বছর বয়সে ১৯৯৯ সালে এক অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের লেকচারার পদে চাকুরি পেলেন। নাহ, অধ্যাপক হিসাবে না, তাকে নেয়া হলো আরেকটি নিচের পদে, আর সেখানেই প্রমোশন ছাড়া ১৪টি বছর কাটিয়ে দিলেন এই গণিতজ্ঞ। ২০০১ সালের পর ১২ বছর ধরে কোনো গবেষণাপত্রও প্রকাশ করতে পারলেন না।

তার পর?

এলো ২০১৩ সাল। বয়স তখন তার ৫৮। একাকী নিভৃতে কাজ করা এই গণিতজ্ঞ হঠাৎ করে গণিতের দুনিয়াকে অবাক করে দিলেন একটি গবেষণা পত্র লিখে। কয়েকশ বছর ধরে মৌলিক সংখ্যার একটা সমস্যা – টুইন প্রাইম কনজেকচার — কেউ সমাধান করতে পারেননি, এই নিভৃতচারী গণিতজ্ঞ একটা পেপার লিখে সেই সমস্যার সমাধানের একটা বিশাল ধাপ এগিয়ে গেলেন। খুব দ্রুত সেই পেপারটা বিজ্ঞ গণিতজ্ঞদের হাতে যাচাই হয়ে প্রকাশিত হলো।

ভাগ্যের সোনার হরিণ অবশেষে ধরাদিলো সেই দুর্ভাগা গণিতজ্ঞ – ইতাং ঝাং (Yitang Zhang) এর কপালে। ২০১৩ সালেই পেলেন গণিতের খুবই বাঘা বাঘা সব পুরস্কার – অস্ট্রোওস্কি প্রাইজ, ২০১৪তেও লাগাতার আসতে লাগলো এমন সব পুরস্কার।

লেকচারার পদ থেকে এক লাভে ২টি ধাপ পেরিয়ে তাকে করা হলো প্রফেসর।

আর গতকাল? ইতাং ঝাং পেলেন বিশ্ববিখ্যাত ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের ফেলোশিপ, যাকে বলা হয় জিনিয়াসদের জন্য বিশাল একটা পুরস্কার, যার মূল্যমান ৬২৫,০০০ ডলার! কেবল প্রচন্ড প্রতিভাবানদের কাজের স্বীকৃতি হিসাবেই এটা দেয়া হয়।

তো ইতাং ঝাং এর ভাগ্যটা গেছে খুলে, কিন্তু তার গল্প থেকে আপনার কী শেখার আছে? এটাই, যে জীবনের, ভাগ্যের বিশাল পরিবর্তনের সময়টা কখনো হয়না শেষ। আপনার পিঠ ঠেকতে পারে দেয়ালে, কিন্তু পরিবর্তন আসে, আসবেই। চেষ্টা করুন, ৮ বছর ধরে অড জব করে কাটানো ইতাং ঝাং যদি নিজের চেষ্টায় পারেন ভাগ্যকে ফেরাতে, তাহলে আপনি কেনো পারবেন না?

অবশ্যই পারবেন।

কারণ ভাগ্যটা আপনি নিজেই গড়বেন।

বয়স কোনো ব্যাপার না, আপনার ভাগ্যটা পাল্টাবার সময় কখনোই যায় না চলে।

ভাগ্যটা গড়বেন আপনিই, আর কবে গড়বেন, সেটাও নির্ধারণ করবেন,

আপনিই।

‪#‎এলোচিন্তা‬ ‪#‎ভাগ্য‬

বই এর প্রকাশকের  পেজটি দেখতে করতে ক্লিক করুন আর ফেইসবুক পেজ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এবং দ্বিতীয় লিংক

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

Leave a Reply