rp_33-300x225.jpg

লিখেছেন: মাকসুদুল হক

শুরুতেই বলে নেই, এই লেখাটি যারা গবেষণা জগতে নতুন, প্রথমবারের মত আপনার আর্টিকেল কোন জার্নালে প্রকাশ করতে চান, তাদের জন্য। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস আছে যা ভালো জার্নালে প্রকাশ করা সম্ভব। কিন্তু অনেক শিক্ষক এ ব্যাপারে উদাসীন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ততোধিক। শুধুমাত্র পাস করার জন্য লেখা হলেও, অনেক থিসিসের গুনগত মান আন্তর্জার্তিক জার্নালে প্রকাশ করার মত। এগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন স্কলারশিপ পেতে ছাত্রদের যেমন সাহায্য করবে, তেমনি শিক্ষকদের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো/ পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসাবে মনোনায়ন পেতেও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। বাইরের দুনিয়ায় ছাত্র-শিক্ষকদের উন্নতমানের পেপার লিখতে উৎসাহ দিতে আর্থিক পুরস্কার দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো গবেষনা প্রকাশণাকে তেমনভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। মনে রাখতে হবে, রিসার্চ পাব্লিকেশন আমাদের দেশের ও ভার্সিটির নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যায়। এটি রিসার্চ কোলাবোরেশন ও আন্তর্জার্তিক গবেষণা অনুদান আনতেও বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
১। কিভাবে আপনার থিসিসকে পেপারে রূপান্তর করবেন?
আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্ট-গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের থিসিস জমা দেবার পরে, সেটাকে পেপারে রূপ দেয়া খুবই সহজ একটি কাজ। পেপারের মূল গঠন থিসিসের চেয়ে অনেক কম হয়ে থাকে। ৬০০০শব্দে হয়ে যেতে পারে একটি পরিপূর্ন জার্নাল পেপার। থিসিস থেকে কাট ছাট করার এই প্রক্রিয়াটি করার জন্য দরকার হবে ২/৪ দিন সময়।
প্রথমে একটি আউটলাইন তৈয়ার করুন। যেমনঃ
১। টাইটেল ২। এবস্ট্রাক্ট ৩। কী-ওয়ার্ড ৪। ইন্ট্রোডাকশন ৪। বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ৫। বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ৬। রেজাল্ট ও ডিস্কাশন ৭। একনলেজমেন্ট ৮। কনক্লুশন ৯। রেফারেন্স
এরপর এই কাঠামোর ভেতরে লিখতে থাকেন।
১.ক। থিসিসের টাইটেলটিকে জার্নাল পেপারের টাইটেল হিসেবে চালিয়ে দিতে পারেন, অথবা কিছু স্পেসিফিক কি-ওয়ার্ড জুড়ে দিয়ে সুন্দর-সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিশ্লেষনাত্মক একটি প্রাসঙ্গিক শিরোনাম দিতে পারেন। অথারলিস্টে শিক্ষার্থীর নাম, সুপারভাইজারের নাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন অব্দান যারা রেখেছেন তাদের নাম থাকা উচিত। এফিলিয়েশনে ভার্সিটির নামের সাথে ঠিকানায় একটি ভাল ইমেইল এড্রেস দিন। পূর্ণ নাম যুক্ত ইমেল এড্রেস দেয়াই প্রচলিতরীতি।
১.খ। এবস্ট্রাক্টটি সংক্ষিপ্ত হতে হবে। সাধারনত ৫০০ বা তার কম শব্দের মদ্ধ্যেই পুরো লেখার সারমর্ম এই অংশে প্রকাশ করতে হয় , জার্নালের গাইড লাইন অনুযায়ী। অবশ্যই আপনার পেপারের গুরুত্ব বুঝিয়ে কিছু ভুমিকা দিতে হবে। এরপরে খুব সংক্ষেপে পেপারে মূল কি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, কি কি মেথড ব্যবহার হয়েছে তার উল্লেখ থাকতে হবে। রেসাল্ট-ডিস্কাশন থেকে ধার করে কিছু রেজাল্টও এই অংশে যুক্ত করতে হবে।
১.গ। কী-ওয়ার্ডঃ ৫/৬ টি শব্দ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনার লেখাটির মূল বিষয় ও সীমানা পরিস্কার করে ফেলতে হবে। কীওয়ার্ড হিসাবে বৈজ্ঞানিক টার্ম, প্যামিটারেরগুলোর নাম ব্যবহার করা যেতে পারে। টাইটেল থেকেও কিছু মূল শব্দ ধার করতে পারেন।
১.ঘ। থিসিসের ইন্ট্রোডাকশন থেকে নির্বাচিত অংশ নিয়ে জার্নাল পেপারের ইন্ট্রোডাকশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ইন্ট্রোডাকশন সাম্প্রতিক রেফারেন্সযুক্ত করা উচিত, বিশেষ করে যেই জার্নালে পাঠাবেন- সেই জার্নালে প্রকাশিত কিছু পেপার অবশ্যই যুক্ত করুন। এই অংশে লেখার স্কোপ, তাতপর্য, গুরুত্ব, উদ্দেশ্য, আপনার পেপারের মূল আলোচ্য সমস্যার বর্নণা থাকতে হবে।
১.ঙ। বিষয় ভিত্তিক আলোচনাঃ এই অংশটি লিটারেচার রিভিউ থেকে নিতে পারেন। পেপারের রেজাল্টগুলোর প্যারামিটারগুলো বর্ননা করতে পারেন। যেসব ইকুপমেন্ট-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তার পরিচিতি ও একুরেসী দিতে হবে। এই অংশে যে মেথডলজি এই পরীক্ষার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও থাকতে হবে।
১.চ। রেজাল্ট ও ডিস্কাশনে গ্রাফ ও টেবিল থাবে। প্রতিটি টেবিল ও গ্রাফের/চার্টের বর্ননা পাশাপাশি থাকতে হবে। ডিস্কাশনে প্রাসঙ্গিক কিছু পেপারের রেজাল্টের সাথে তুলনা থাকতে পারে।
১.ছ। কনক্লুশনঃ রেজাল্টে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ন তথ্য এইখানে পয়েন্ট আকারে লিখুন। থিসিসে অনেক বড় করে লিখা থাকলে, সেখান থেকে কেটে ছেটে সংক্ষেপে দিন। অবশ্যি কিছু নিউমারিক রেজাল্ট থাকতে হবে, শুধু তুলনামূলক আলোচনা থাকলে চলবে না।
১.জ। একনলেজমেন্টঃ আপনার ল্যাব এসিস্টেন্ট, সহকারী, পরামর্শদাতা, আর্থিক সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এই অংশে উল্লেখ করুন।
১.ঝ। রেফারেন্সঃ রেফারেন্স লিখার অনেক পদ্ধতি আছে। আপনি যে জার্নালে পাঠাবেন, সেখানে কোন পদ্ধতিতে লিখতে বলছে সে অনুযায়ী সাজান। যেমনঃ হার্ভার্ড, নাম্বারিং সিস্টেম। রেফারেন্স সাজানোর অনেক সফটওয়ার আছে, যেমনঃ END NOTE(http://www.endnote.com/ ), ProCite (http://www.procite.com/ ) ইত্যাদি। ইউটিউব থেকে এগুলোর ব্যবহারবিধি সহজে শিখতে পারবেন।

আমি চেষ্টা করেছি আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে বা নতুন কিছু সংযোজন করার থাকলে অভিজ্ঞরা এডিট করে দিবেন।

হ্যাপী পাব্লিশিং!

মাকসুদুল হক

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

Leave a Reply