3

লিখেছেন: মাকসুদুল হক

গবেষণার ফল প্রকাশের মাধ্যম হলো একটি গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার লেখা। সেটা কনফারেন্স অথবা জার্নালের জন্য লেখা হয়। আজ বলবো সেটা কীভাবে লিখতে হবে, তার কিছু দিকনির্দেশনা।
* ভেন্যু – প্রথমেই ঠিক করে নিন, কোথায় পেপারটা পাঠানো হবে। প্রত্যেক কনফারেন্স বা জার্নালের নিজস্ব ফরম্যাট থাকে এবং সেটার জন্য ল্যাটেক বা ওয়ার্ড টেম্পলেট থাকে। সেটা না থাকলেও ফরম্যাট বলে দেয়া থাকে। সেই ফরম্যাট বা টেম্পলেট হুবুহু ব্যবহার করতে হবে।
* কীভাবে লিখবেন? – মনে রাখবেন, আপনার পেপারের শিরোনাম যদি পড়ে ১০০০ জন, abstract পড়বে ১০০ জন, Introduction পড়বে ২০ জন, আর এর পরে যাবে হয়তো ৫ জন। কাজেই শিরোনামটা যথাযথ এবং ইন্টারেস্টিং করে দিতে হবে।
abstract অংশে খুব সংক্ষেপে বলতে হবে কী করা হয়েছে এই পেপারে। এটা খুবই সংক্ষিপ্ত লেখা, ৫ থেকে ৬ বাক্যে শেষ করতে হবে এই অংশ।
Introduction অংশটা পেপারের খুবই দরকারি জায়গা। এটা ভালো না হলে কিন্তু পাঠক আর পরে যাবে না, কাজেই এখানে পুরা পেপারের মোদ্দা কথাটা সংক্ষেপে বলতে হবে। সমস্যাটা কী, কেনো এটা দরকারি, আর আপনার সমাধান কী এসবকে খুব ইন্টারেস্টিং করে লিখতে হবে। এটার জন্য স্টানফোর্ডের ইন্ফোল্যাবের একটা ফরমুলা আছে, সেটা এরকম
– প্রথম প্যারা – সমস্যাটা কী?
– দ্বিতীয় প্যারা – এটা কেনো গুরুত্বপূর্ণ
– তৃতীয় প্যারা – এটা সমাধান করা কেনো অনেক কঠিন কাজ।
– চতুর্থ প্যারা – অন্যরা কীভাবে সমাধান করতে গেছিলো, এবং কেনো তাদের সমাধানগুলা কাজ করে না ভালো করে।
– পঞ্চম প্যারা – আপনি কীভাবে সমাধান করেছেন এবং কেনো সেটা অন্যদের চাইতে ভালো।
পেপারের পরের অংশে থাকবে motivation বা background যাতে পাঠক সমস্যার পটভূমি সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
তার পরে থাকবে আপনার সমাধান অথবা আপনার বিশ্লেষণের উপরে আলোচনা।
এক্সপেরিমেন্ট করে থাকলে সেটার উপরে আলাদা সেকশন করে আলোচনা করতে হবে। কেবল এক্সপেরিমেন্টে কী পেয়েছেন তা লিখলেই হবে না, কেনো এরকম হলো এবং এর তাৎপর্য কী, তা লিখতে হবে।
রিলেটেড ওয়ার্ক সেকশনে লিখতে হবে বিস্তারিত করে অন্যেরা কী করেছে, সেটা। তবে খেয়াল করে লিখবেন, অন্যেরা “আলতু ফালতু কাজ করেছে যা একেবারেই ভুয়া” এরকম বাজে করে লিখবেন না, বরং মধুরভাবে মিছরির ছুরি দিয়ে অন্যদের কাজ ভালো হলেও ততোটা কার্যকর না, বরং আপনারটাই কাজ করে, তা লিখতে হবে।
পরিশেষে আলোচনা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা লিখে পেপার শেষ করবেন।
একবার লেখার পরে অন্য কাউকে দিয়ে পড়াবেন। কারণ অনেক কিছুই গবেষক হিসাবে আপনার নখদর্পনে থাকলেও পাঠকেরা বুঝবেনা, তাদের বোঝাতে হবে, সেটা আপনি নন, অন্য পাঠকই বুঝবে। আর প্রিন্ট করে নিয়ে প্রতিটা বাক্য, শব্দ একবার করে সশব্দে পড়ে দেখবেন, ভুলভাল হচ্ছে কি না।
ব্যকরণ, বানান ঠিক ভাবে লিখবেন। Strunk এর The Elements of Style বইটাতে অনেক ফরম্যাটিং, দাড়ি কমা দেয়ার কায়দা এসব বলা আছে। স্পেলচেকার দিয়ে বানান পরীক্ষা করে নিবেন। ভুলভাল বানান অনেক ভালো পেপারকেও রিজেকশনের দিকে ঠেলে দেয়, কারণ ভুল বানান বা ব্যকরণ পেপারের রিভিউয়ারদের বিরক্ত করে দেয় ভীষণ।

আশা করি এই পরামর্শগুলা কাজে আসবে। ভালো থাকুন, প্রকাশ করুন আপনার গবেষণার সব ফল ভালো একটা রিসার্চ পেপারে।

আমি চেষ্টা করেছি আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে বা নতুন কিছু সংযোজন করার থাকলে অভিজ্ঞরা এডিট করে দিবেন।
মাকসুদুল হক

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

Leave a Reply