3জার্মানীতে আসার বছর খানেক পরে শহর কর্তৃপক্ষ একটা বিশেষ খানাপিনার আয়োজন করেন। ছোট শহরে সদ্য প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী ও স্থানীয়দের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির উদ্যেশ্যে এলাকার বিশিষ্ট লোকজন, ভার্সিটির কিছু শিক্ষক আর কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে দাওয়াত করা হয়। সবাই নিজ নিজ দেশের খাবার রান্না করে ও প্রত্যেকেই অন্যের খাবাবের স্বাদ আস্বাদন করেন। শেষের দিকে স্থানীয় একটি সমাজ সঙ্ঘ এর সভাপতি আমাদের ফ্যাকাল্টি ডীনকে অনুরোধ করেন দুইজন বাংলাদেশী ছাত্রকে নির্বাচিত করতে যারা মাসখানেক পরে সেই সংঘের বাৎসরিক উৎসবে যোগ দেবে ও বাংলাদেশ সম্পর্কে উপস্থিত অতিথিদেরকে সম্যক ধারণা দেবে। ডীন সাহেব আমাকে আর আমার বন্ধু মামুন (ছদ্মনাম) কে অনুরোধ করলেন সে উৎসবে যোগ দিতে।

নির্ধারিত সময়ে সেই সংঘের উৎসবে হাজির হলাম। সভাপতি সাহেব আমাদেরকে একটি হলে নিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখি, ৫০-৮০ বছর বয়সী ৩০ জনের মত ভদ্রমহিলা-ভদ্রলোক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাদের জার্মান তেমন একটা ভাল না হওয়ায় সভাপতি সাহেব অনুবাদকের দায়িত্ব নিলেন। আমরা ইংরেজিতে কথা বলি আর তিনি উপস্থিত দর্শকদের সেগুলোকে জার্মানে বুঝিয়ে বলেন।
শুরুতে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ভাল ভাল তথ্য দেওয়ার সুযোগ থাকলেও কিছুক্ষণ পরে আমাদেরকে বাংলাদেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার অনুরোধ জানানো হলো। আমি সব সমস্যার জন্য রাজনীতিকদের আর মামুন আর্থসামাজিক অবস্থাকে দায়ী করল। দুজনে মিলে ৪০ মিনিটের মত বিতর্ক করলাম। দেশ নিয়ে যত হতাশা ছিল সব নির্দ্বিধায় উগলে দিলাম ও অন্তরে আধ্যাতিক শান্তি অনুভব করলাম!
এরপরে উন্নতমানের দুপুরের খাবার ও বেশ কিছু উপহার বগলদাবা করে আমরা সেখান থেকে বিদায় নিলাম।

কিছুদিন পরে আমরা বুঝতে পারলাম সেদিন কি বোকামোই না করেছি। আবেগের বশীভুত হয়ে নিজের মাতৃভুমি নিয়ে কত সমালোচনা করেছি অথচ আমরা নিজেরাই কাপুরুষের মত বিদেশে পালিয়ে এসেছি। নিজের মা পতিতা হলেও তাকে অন্যের সামনে অপমান করা ভাল ছেলের পরিচয় না, বরঞ্চ পতিতা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনাই প্রকৃত সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেদিন দুই বন্ধু প্রতিজ্ঞা করলাম বিদেশীদের সামনে দেশকে অযথা ছোট না করার।

অনেকেই হয়ত মনের অজান্তে ভিনদেশীদের কাছে নিজের দেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ বা কটু মন্তব্য করে, তাদের উদ্যেশ্যে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

mm

By Shariat Rahman

আমি বর্তমানে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্সে সায়েন্টিফিক এসিস্ট্যান্ট (Wissenschaftlicher Mitarbeiter) হিসেবে কাজ করছি। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে আইপিইতে ব্যাচেলর আর ২০১২ সালে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্স থেকে বায়োনিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে সোস্যাল মিডিয়া, আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।

Leave a Reply