নিজের একটা ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। গত সেমিস্টারে ফুয়েল সেলের উপর একটা ল্যাব করতেছিলাম। ল্যাবের ইন্সট্রাক্টর ছিল একজন পোস্ট ডক। যাই হোক, ল্যাব শেষে উনি সবাইকে যার যার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলেন। কে কোথা থেকে এসেছ, কোন সাব্জেক্টে ব্যাচেলর এই টাইপের গতবাধা প্রশ্ন।

একে একে আমার পালা এল। উনি গতানুগতিক প্রশ্ন করল। দেশের বাইরে কারো সামনে বাংলাদেশ থেকে এসেছি, কথাটা বলতে বেশ ভাল লাগে। কারণ সবাই প্রথমেই ভেবে নেয়, আমি ইন্ডিয়ান অথবা পাকিস্তানী। ভিন্ন একটা দেশের নাম শোনার পর সবাই খুব অবাক হবার একটা ভান করে। দেখতে বেশ ভাল লাগে।

যাই হোক, আমি বাংলাদেশ বলার পরে ওই পোস্ট ডক বেশ অন্যরকম একটা ইম্প্রেসান দেখাল। আমি বললাম, তুমি চেন নাকি।
সে বলল, আরে চিনব না কেন। এবারই তো প্রায় ১০০০ এর মত বাংলাদেশী আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেছে। এবং অনেকের রেজাল্টই বেশ ভাল। আমাদের স্ক্রিনিং করতে একেবারে হালুয়া টাইট অবস্থা !
আমিতো মনে মনে বেশ খুশি হলাম। বাহ, বাঙ্গালী পোলাপাইনের তো বেশ ভালই সুনাম।

এর পরে সে হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করে বসল, আচ্ছা, তোমাদের হাই স্কুল ফাইনাল এক্সাম (HSC) সম্পর্কে বল। আমি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। হালায় কয় কি !!! আমি HSC exam নিয়া কি কমু।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন জানতে চাইছ?
‘আসলে আমি যতগুলা স্টুডেন্টের প্রোফাইল দেখেছি, সবাই দেখি জিপিএ ৫। তোমাদের ওখানে কি সবাই জিপিএ ৫ পায়??
আমিতো অন্যান্য দেশের স্টুডেন্টদের প্রোফাইল স্ক্রিন করেছি। কোথাও হাই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় এত ভাল রেজাল্টের কোন নজির নাই। বাংলাদেশে সব পোলাপাইনই কি মেরিটরিয়াস নাকি।’

আমি মোটামুটি ১০-১৫ সেকেন্ডের জন্য পুরোপুরি ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গিয়েছিলাম ! কি জবাব দিব আমি, কিছুই মাথায় আসছিল না !
আমি আমতা আমতা করে বললাম, আসলে তা না। যারা জিপিএ ৫ পায়, তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশের ভাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পায়। অন্যরা পায় না।

ওই ভদ্রলোক বেশ টাস্কি খেয়ে গেল। বলল, ‘কি বলছ এসব ! তার মানে জিপিএ ৫ এর চেয়ে কম পেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবে না। এটা কেমন কথা !’
আমি এর পরে মিন মিন করে কিছু একটা উত্তর দেয়ার চেস্টা করেছিলা। কিন্তু উনার পছন্দ হল না। এই যাত্রায় ভুগিচুগি দিয়ে কোন মতে পার হলাম।

প্রশ্ন হল, আসলেই তো তাই। এটা কিভাবে সম্ভব !!! দেশের সব পোলাপাইন জিপিএ ৫। কিন্তু কিভাবে যে জিপিএ ৫ পাচ্ছে, এটা আমি তাকে কেমনে বুঝাব। সবার এখন টার্গেট জিপিএ ৫। সারা বছর শুধু রেজাল্টের আসায় পড়তেসে। আবার কেউ কেউ পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন নিয়ে কেল্লাফাতে।

ভাবতেই লজ্জা লাগতেসে, কিভাবে ক্লাস ৫/ ক্লাস ৮ এর ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে নকল। তাও শিক্ষকরাই হলেন নকলের সাপ্লাইয়ার। আমার স্কুলের ১০০ ভাগ ছাএছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে, শুধু এই বাক্যটুকু বলার জন্য এভাবে নোংরামী করছে। শেইম অন এডুকেশান সিস্টেম। আবার শিক্ষামন্ত্রীর বড় বড় কথা। না কিছুই ফাস হয় নাই। কোন নকল হয় নাই। হায়রে দুনিয়া !!! ভাগ্যিস বাংলাদেশে বড় বড় মিডিয়াগুলার খুব ভাল কাভারেজ নাই। নাহলে এই সব খবর বিবিসি, সিএনএন এর হেডলাইন হইত, এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।

তবে সেইদিন বেশি দূরে নাই, যেদিন হয়ত বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র এই অভিশপ্ত ভাল রেজাল্টের জন্য।

 

mm

By Tousif Bin Alam

এখনঃ Master of Science in Power Engineering, Technical University Of Munich, Germany. আগে: Islamic University of Technology এবং Govt. Hazi Mohammad Mohsin College, Chittagong.

One thought on “অভিশপ্ত ভাল রেজাল্ট!”
  1. ভাইয়া জার্মানীতে পড়ার জন্য এসএসসি এবং এইচএসসি তে কি রেজাল্ট পেতে হবে?

Leave a Reply