তখন প্রথম জার্মানিতে এসেছি। মন খারাপ থাকে প্রায়ই। এরমধ্যে জীবনের প্রয়োজনে কাজে নেমে পড়লাম। বাকনাং নামক এক স্থানে কাজে যেতাম। প্রথম দিন ট্রেন থেকে নেমে বাসে বসে আছি। ঠিক মিনিট তিনেক পরে হুড়মুড় করে একদল বিভিন্ন বয়সী ছেলে মেয়ে উঠে আসলো। সৃষ্টিকর্তা তাদের সব দিয়ে শুধু বুদ্ধির জায়গায় পিছিয়ে রেখেছেন। কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী। কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্রাসে নামক এক জায়গায় কাজে যেতো। মানসিক আর শারীরিক প্রতিবন্ধীরা আমাদের দেশে কাজ করে শুনলে মানুষে হাসবে। সুস্থ মানুষ কাজ পায়না আর মানসিক প্রতিবন্ধী?

বর্তমানে যে স্থানে আছি সেখানে ‘ক্যাপ মার্কেট’ বলে একটা গ্রোসারী শপ আছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গরা। দেখলে অবাক হতে হয়; শারীরিক অক্ষমতা কে ওরা জয় করে কাজ করে খায়। কেউ কেউ বাঁকা হাত পা নিয়ে আস্তে আস্তে সবজি সাজিয়ে রাখছে। কেউ কোন অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকায় না। বর্তমানে যে অফিসে কাজ করি সেখানে একদিন সকালের শিফটে বসে আছি। হঠাৎ একজন এসে কথা বলা শুরু করলো। নানান প্রশ্ন। খুব খেয়াল করে দেখলাম সে বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী। সে কোন একটি কাজ না বুঝলে আমি তাকে ধীরে ধীরে বুঝিয়ে দিলাম। অবাক ব্যাপার হল সে দ্বিতীয়বারেই আমাকে অবাক করে দিয়ে নিখুঁতভাবে কাজ করতে লাগলো।

আমাদের সমাজে কোন সন্তান যদি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয় তাহলে তার পরিবারের যেন দুঃখের শেষ নেই। সরকার থেকে তাদের গড়ে-পিঠে সমাজের সচল মানুষ করে তুলবার প্রয়াসের তো যথা সামান্য। অথচ সুস্থ খেলোয়াড়রা অলিম্পিকে যেয়ে পালালেও মানসিক ভাবে অসুস্থ একদল ছেলে মেয়ে প্রতি বছর রাশি রাশি স্বর্ণ নিয়ে আসে। চোখে মুখে অদ্ভুত সরলতায় ভরা। ওদের কে যদি প্রশিক্ষণ দেয়া যায়; তাহলে ওরা সবচেয়ে আগে এবং সবচেয়ে নিখুঁতভাবে ভাবে শেখে।

মোদ্দা-কথা হল সমাজে আমরা যারা নিজেদের সুস্থ দাবি করি তারাই অসুস্থ। আমরা মানুষকে মানুষ ভাবার আগে অন্ধ, মানসিক প্রতিবন্ধী, নানান ধর্মের, রাজনীতির, পেশার গোলকধাঁধায় মিশিয়ে ফেলি। অথচ একবার যদি ”বাংলাদেশী”ভেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতাম আজকে চিত্র অন্যরকম হত।

আমরা কেমন? একটা দুঃখজনক গল্প দিয়ে শেষ করি। তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। যাতায়াতের প্রয়োজনে পোড়াদহ নামক রেলস্টেশন দিয়েই আমাকে যেতে হয়। সেখানে ভরাট যৌবনা এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে দেখতাম। মানুষে উপহাস করতো। নানান টিটকারি করতো। কোন একদিন শুনি প্রায়ই তাকে খাবারের লোভ দেখিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ তাকে ব্যবহার করে। কি আজব …!!!

ছবিঃ thenextweb

mm

By Shah Waez

International Student Program Moderator bei horads 88,6 - Hochschulradio Stuttgart. Wohnt in Stuttgart.

Leave a Reply