ভিসা এপ্লিকেশনের নতুন নিয়ামাবলী

আমি RWTH-Aachen ভার্সিটি থেকে অ্যাডমিশন কনফার্মেশন পাই এপ্রিলের ২৭ তারিখ। তখন প্রথমেই জার্মান এম্ব্যাসীর সাইটটা ভিজিট করি এবং বেশ ভালোই ডিরেকশন পাই কিভাবে ভিসার কাজ করতে হবে। সবকিছুই ক্লিয়ার ছিলো না কিন্তু ভিসা অ্যাপ্লাইতে বিশাল হেল্প পাওয়া গিয়েছে ফেসবুকে জার্মান স্টুডেন্টদের গ্রুপ থেকে । আমি এখানে আমার অভিজ্ঞতা, গ্রুপের কিছু ভাইটাল অবজারভেশন এবং টাইমলাইন সবকিছুই লেখার চেষ্টা করছি। মনে রাখবেন আপনার অভিজ্ঞতা আমার সাথে নাও মিলতে পারে কারণ আমি ২০১২-উইন্টার সেমেস্টার টাইমলাইনে সব লিখছি, যেটা আপনার সময়ের সাথে ভিন্ন হলেও হতেও পারে……

অফার লেটারঃ

আমি কনফারমেশন পেয়েছিলাম ২৭শে এপ্রিল (ইমেইলে)। এর ১মাস পরে বাসার অ্যাড্রেসে ভার্সিটির অফার লেটারের হার্ডকপি এসে পৌছাইসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখলাম যে মেইলে কনফার্মেশন পাওয়ার ১ মাস পরে হার্ড কপি বাসায় আসছে। কোন কোন ভার্সিটি বেশী ভালো, তারা মেইলে কনফার্মেশন পাঠানোর সময় অফার লেটারের সফট কপিটাও সাথে অ্যাটাচ করে দেয় আবার হার্ডকপিটাও বাই-পোস্ট বাসায় পাঠায়। যদি আপনি মেইলে কোন রেজাল্ট না পান কিন্তু একই ভার্সিটিতে অন্য কেউ মেইল পেয়ে থাকে তাহলে ইমিডিয়েটলি ভার্সিটির সাথে মেইলে যোগাযোগ করুন, প্রয়োজন হলে ফোন দিন। অনেককেই দেখলাম একমাস পরে অ্যাডমিশন স্ট্যাটাসের জন্যে মেইল করে জেনেছে যে তার অ্যাডমিশন হয়েছে, এমন সিচুয়েশন এড়ানোই ভালো।

আপনার অফার লেটার যদি ইংরেজীতে হয় তাহলে আপনার লাক খুব ভালো এবং আপনি নিচের প্যারায় চলে যেতে পারেন। অন্যদিকে যদি প্রধান অফার লেটারটা জার্মান ভাষায় হয় তাহলে আলাদা করে একটা ইংরেজী ট্রান্সলেটেড কপিও থাকে সাধারনত অফার লেটারের সাথে। এই ইংরেজী ট্রান্সলেটেড কপিটা খুব কাজে লেগেছে আমার। কারণ বেশিরভাগ ব্যাংকেই জার্মান অফার লেটার গ্রহন করেনা স্টুডেন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করার জন্যে তাই তাদের একটা ইংরেজী ট্রান্সলেটেড কপি দরকার হয়। যদি আপনার লাক খারাপ হয়ে শুধু জার্মান ভাষায় অফার লেটার পান তাহলে ভার্সিটিকে একটা ইংরেজী ট্রান্সলেটেড কপির জন্যে যোগাযোগ করে অনুরোধ করুন, ভার্সিটিই তখন সেটা প্রোভাইড করবে। ভার্সিটি যদি বলে যে ইংরেজী কপি দিতে পারবে না তখন যেই ব্যাংক জার্মান অফার লেটার এক্সেপ্ট করে ওই ব্যাংকেই সকল ব্যাংক রিলেটেড কাজ সেরে নিন (ইস্টার্ন ব্যাংকে জার্মান অফার লেটারে সমস্যা নেই, ২০১২-আগস্টে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য)

ভিসা এপ্লিকেশনের নতুন নিয়ামাবলী

এম্ব্যাসী অ্যাপয়েনমেন্টঃ

যেভাবে কাজ করে জার্মান এমব্যাসি ঢাকা online student visa appointment পদ্ধতি

ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের ছবি+হেলথ ইনশিওরেন্স

ছবিঃ ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের ছবি নিয়ে অনেকেই অনেক টেনশিত এবং মোটামুটি ধরেই রেখেছেন গুলশানের কোন একটা ফটো স্টুডিও থেকে ছবি না তুললে অ্যাম্বাসী তা এক্সেপ্ট করবে না। আসলে এটি ভুল ধারণা। আপনারা যখন ভিসা অ্যাপ্লাই করছেন তখন এই সাইটে ছবি রিলেটেড ডকুমেন্টটা একবার পড়েন এবং সেইমত ইনস্ট্রাকশন দিয়ে বাংলাদেশের যেকোন ফটো স্টুডিও থেকেই ছবি প্রিন্ট করায় নেন, কোন সমস্যা নাই।

আমি আমার ছবি বাসার কাছে নীলক্ষেত থেকেই প্রিন্ট করায় নিসিলাম। ছবি প্রিন্ট করানোর সময় এইটা মাথায় রাখবেন যে “aspect ratio” যেন ঠিক থাকে কারণ সবখানেই দেখা যায় যখন বলবেন ২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য হতে হবে তখন ওরা সাইজ এডিটে যেয়ে ২ লিখে দেয় “aspect ratio” ঠিক না রেখেই, ফলে প্রস্থে দেখা যায় ছবিটা গুবলেট হয়ে গেসে এবং প্রিন্ট করার পরে খুবই প্যাথেটিক দেখায়। আমি যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছিলাম আমার বেলায়: প্রথমে আগের তোলা ছবিটার পুরোটা কপি করেন। তারপর ২ বাই ২ সাইজের একটা পেজে সেই ছবিটা পেস্ট করেন। তারপরে যতক্ষন না মুখের এরিয়াটা পুরো ছবির ৬০% হয় অতক্ষন রিসাইজ করেন। একসময় দেখলাম ছবির সাইজ মোটামুটি ৬০% কাভার করতিসে পুরো ২ বাই ২ সাইজের পেজটায় এবং তখন প্রিন্ট দিতে বললাম।এরা তো ১টা ছবি প্রিন্ট দেয়না, দিলে একবারে ৪টা। এবং আমি সেই ৪টা ছবি এই জায়গাগুলোয় ব্যবহার করেছি এখন পর্যন্তঃ #ভিসা অ্যাপ্লিকেশন (বাংলাদেশে) #ভার্সিটি এনরোলমেন্ট (জার্মানী এসে) #হেলথ ইনশিওরেন্স (জার্মানীতে) এবং #ভিসা এক্সটেনশন (জার্মানীতে)………..অতএব আমি এটা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে এই সাইটের ডকুমেন্টটা ফলো করলেই আপনার কোন সমস্যা নাই  ঠিক যেভাবে আমার সমস্যা হয়নাই।

ভিসা এপ্লিকেশনের নতুন নিয়ামাবলী

হেলথ ইনশিওরেন্সঃ এখন ভিসা অ্যাপ্লিকেশনে নতুন একটা ডকুমেন্ট দেখলাম চাইছে হেলথ ইনশিওরেন্স নিয়ে। এটা নিয়ে টেনশন করার কিছু নাই এবং এটা করা একটা দিক দিয়ে ভালো কারণ এই দেশে অসুখ হলে এবং হেলথ ইনশিওরেন্স না থাকলে সেটা খুবই ভয়াবহ ব্যাপার। আপনারা হেলথ ইনশিওরেন্স বিডি থেকেই করবেন এবং এই রিলেটেড কিছু সাজেশনঃ

  • এলেবেলে কোন ইনশিওরেন্স থেকে এটা করবেন না। আপনারা এই লিংকে যেয়ে একটা লিস্ট পাবেন যেখানে দেয়া আছে কোন কোন ইনশিওরেন্স কোম্পানী এক্সপ্টেড। ওগুলোর যেকোন একটা থেকে করলেই হবে (খরচের ব্যাপারটা আপনার উপর, অ্যাম্বাসীর কাছে এই লিস্টের সবগুলোই চলবে)
  • এই লিস্টে দেখবেন সবগুলো ইনশিওরেন্স কোম্পানীর ফোন নাম্বার আছে। তাদের ফোন করে “শেনজেন ভিসায় ট্রাভেল করতে জার্মানী যাবেন তাই হেলথ ইনশিওরেন্স লাগবে” এই বাক্যটা বলবেন, বাকিটা ওরাই বলে দিবেঃ কত টাকা লাগবে, কতদিন সময় লাগবে ইত্যাদি
  • ইনশিওরেন্স কোম্পানীকে বলবেন যেই মাস থেকে আপনার ক্লাস শুরু সেইমাস থেকে আপনাকে ৩ মাসের ইনশিওরেন্স দিতে। কোনভাবেই ভিসা অ্যাপ্লাই করার ডেট থেকে না কারণ ভিসা অ্যাপ্লাই করার ৩ মাস পরেও অনেকেই ভিসা নাও পেতে পারে (বিশেষ করে ল্যাংগুয়েজ কোর্সের যারা)
  • ইনশিওরেন্সটা জার্মানী আসার সময় পাসপোর্টের মতই গুরুত্বপূর্ন ডকুমেন্টগুলোর সাথেই রাখবেন
  • জার্মানীতে এসে আপনাকে জার্মান কোন প্রভাইডার থেকে নতুন করে ইনশিওরেন্স করতেই হবে তার আগে পর্য়ন্ত বাংলাদেশ থেকে আনা হেলথ ইনশিওরেন্স ভ্যালিড

ডকুমেন্ট তৈরী করাঃ

জার্মানীতে অ্যাপ্লাই করার সময় আপনার নিচের প্রতিটা ডকুমেন্টের ২কপি ফটোকপি লাগবে- (১) অফার লেটার (২) বিএসসি সার্টিফিকেট (৩) বিএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট (৪) এইচএসসি সার্টিফিকেট (৫) এইচএসসি গ্রেডশীট (৬) এসএসসি সার্টিফিকেট (৭) এসএসসি গ্রেডশীট (৮) এসএসসি অ্যাডমিট কার্ড (৯) এইচএসসি অ্যাডমিট কার্ড (১০) এসএসসি রেজিস্ট্রেশন কার্ড (১১) এইচএসসি রেজিস্ট্রেশন কার্ড (১২) আপনার ল্যাংগুয়েজ কোর্সের রেজাল্টশীট (আই.ই.এল.টি.এস বা টোফেল স্কোর) (১৩) ব্লক অ্যাকাউন্ট সার্টিফিকেট (১৪) অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম (এই লিংকে পাওয়া যাবে সেটা) (১৫) পাসপোর্ট

আপনাকে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ৩কপি দিতে হবেঃ এক কপি অরিজিনাল এবং বাকি ২ কপি ফটোকপি। আপনি যেটা করবেন তা হলোঃ অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটা এডিটেবল পিডিএফ, তাই ওটা পূরন করে ৩ কপি প্রিন্ট নিবেন, কাজ শেষ।

ব্লক অ্যাকাউন্টঃ

এখানে দেখুন।

ভিসা ইন্টারভিউঃ

আপনার ১৫টা ডকুমেন্টের সবকয়টাই রেডি করে নির্ধারিত দিনে সকাল ৮:৩০ এর মাঝেই এম্ব্যাসীতে চলে যান (যদিও ৯টা বলা থাকে কিন্তু রাস্তার অনাকাঙ্খিত জ্যামটাও আপনার মাথায় রাখতে হবে)। এম্ব্যাসীতে ভিতরে প্রথমে একজন সব ডকুমেন্ট জমা নিবে এবং মিলিয়ে দেখে বলবে তার আরো কোন ডকুমেন্ট দরকার আছে নাকি। এরপরে আপনার ডকুমেন্টগুলো দেখে সে আপনাকে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার স্লিপ দিবে এবং আপনাকে বলবে ইন্টারভিউয়ের জন্যে যেতে। ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া ও ভিসা-ইন্টারভিউ দেয়া ২টা আলাদা জিনিস এবং একেকজনকে একেকটা কাজ আগে করতে বলবে। আপনাকে যা বলবে সেভাবেই করবেন।

ভিসা ইন্টারভিউ যিনি নেন তিনি একজন জার্মান এবং তিনি আপনাকে আপনার স্টাডি, ব্যাকগ্রাউন্ড, ফ্যামিলি, জার্মানীতে যেয়ে কি করবেন, পাস করে কি করবেন এসব নিয়ে প্রশ্ন করবেন। সুন্দরমত সব উত্তর দিন এবং আপনি কয় তারিখে যেতে চাচ্ছেন জার্মানীতে সেটা তাকে জানান যাতে তিনি আপনার জন্যে সেভাবে রিকমেন্ড দিয়ে রাখতে পারেন।

শেষকথাঃ

এই মোটামুটি। মেইল করা, ব্লক অ্যাকাউন্ট খোলা, ডকুমেন্ট ম্যানেজ, অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ফিলআপ সব নিজেই করেছিলাম এবং বিশ্বাস করুনআপনার কোন রকমের কোন ধরনের কোন প্রকারের দরকার নাই কোন ভিসা প্রসেসিং এজেন্সীকে টাকা দেয়ার। প্লিজ আপনার মূল্যবান অর্থ এরকম অপচয় করবেন না। আপনার যেকোন সমস্যায় আমাকে/ফেসবুকে গ্রুপে  জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, সাহায্য করতে পারলে আমরা খুশীই হবো। শুভকামনা সবসময়

লিখেছেন Seoul Raihan, জানুয়ারী ২০১৪

ভিসা এপ্লিকেশনের নতুন নিয়ামাবলী

By Seoul Raihan

সাইট অ্যাডমিন - জার্মান প্রবাসে.com

Leave a Reply