এই প্রবন্ধের লিখার বিষয়বস্তু কিছুটা ভিন্ন এবং অপ্রিয়। পাত্রে ও অপাত্রে সরাসরি অপ্রিয় সত্য বলার কারণে নিজেও কিছুটা অনেকের কাছেই অপ্রিয়। কাজেই এই প্রবন্ধটি নিজ দায়িত্বে পড়বেন এবং দয়া করে আমাকে নিজের অপ্রিয় মানুষের তালিকায় নেয়া থেকে বিরত থাকবেন। এখানে বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে আসা অভিবাসীদের বিভিন্ন ব্যাপারে ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে আলোচনা করা হবে, আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা নিয়ে প্রায়ই মুখোমুখি হই।
জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমঃ
আমরা বাংলাদেশীরা প্রায় সময়ই নিজেদের ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ গর্বিত থাকি। বাল্যকাল থেকেই যেহেতু দেশপ্রেমকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে শিখে এসেছি, তাই বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অথবা অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উড়াতে অথবা পতাকা লাগানো টিশার্ট বা বিভিন্ন জামা পরতে আমরা খুবই গর্বিত হই। বাংলাদেশে থাকলে আপনি অবশ্যই এসব নিশ্চিন্তে করতে পারেন, কোন সমস্যা নেই। আর মার্কিন সংস্কৃতিতেও আমরা এটা দেখেছি যে, তারা নিজস্ব পতাকা আর জাতীয়তা নিয়ে বেশ গর্বিত।
বিষয়গুলো হয়তো এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খারাপ না। জার্মানিতে প্রেক্ষাপটটা কিন্তু বেশ ভিন্ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধতে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে এমনিতেই জার্মানরা খুবই লজ্জিত ও অনুতপ্ত। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানবতাবাদী চিন্তা-ভাবনার কারণেই যে কোন যুদ্ধকে তারা ‘মহান’ আখ্যায়িত করা থেকে বিরত থাকে। তাই জার্মানরা সাধারণত জাতীয় পতাকা উড়ানো, পতাকা লাগানো টিশার্ট পরিধান করা, পতাকার মনোগ্রাম লাগানো প্রোফাইল ফটো দেয়া – এধরণের কাজ থেকে বিরত থাকে। তাই নিজে এধরণের কিছু করার আগে নিজের আশেপাশের জার্মানদের কাছে নিজেকে জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন কিনা – সেটাও একটু ভেবে দেখতে পারেন।
প্রাসঙ্গিকভাবে আরও একটি বিতর্কিত বিষয় চলে আসে। সেটা হল রাষ্ট্রপ্রদত্ত মৃত্যুদণ্ড। একটি বিশেষ কারণে (প্রসঙ্গটি এখানে মুখ্য বিষয় নয়, তাই আলোচনা করতে চাইছি না) আমরা অনেকেই মৃত্যুদণ্ডের পক্ষপাতী, যা সাধারণত জার্মানরা নয়। কোনও ব্যাক্তি কাউকে খুন করলে সেটা অপরাধ, কিন্তু একই অপরাধ রাষ্ট্রকেও করতে দেয়ার পক্ষপাতী তারা বেশীরভাগক্ষেত্রে নয়। তাই আপনি যদি মৃত্যুদণ্ডের পক্ষের দিকের লোক হয়ে থাকেন, তাহলে এই ব্যাপারে তাদের সাথে উচ্চবাচ্য না করাই প্রজ্ঞাবানের কাজ। তবে হ্যাঁ, জার্মানিতে অবশ্যই আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে এবং আপনি নিজেই নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কোন ধরণের ব্যাক্তিত্বের মানুষ হিসেবে আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে চান।
ধর্ম ও রাজনীতিঃ
বাংলাদেশে আমরা খুব সহজেই একজন আরেকজনকে আমরা ধর্মীয় আর রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করি। এমনকি এইসব ব্যাপার নিয়ে বিতর্ক থেকে ঝগড়াও শুরু হয়ে যায়। এখানে লোকজনেরা খুব সহজে এসব ব্যাপার নিয়ে সাধারণত কথা বলতে চায় না। নিতান্তই পরিচিত হলে মাঝে মাঝে হয়তো বলে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল, ধর্ম আর রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিন্নতা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কিংবা কারোও সাথে বন্ধুত্বে তেমন কোনও প্রভাব ফেলে না, যদি না অন্যদিক থেকে সমস্যা থাকে। বিশ্বাসটা তাদের কাছে খুবই ব্যাক্তিগত ইস্যু, এবং নিজের বিশ্বাসের দিকে অন্যকে আহবান করা অথবা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠা করা – এধরণের চিন্তা-ভাবনা খুব কম লোকের মধ্যেই আছে। তাই একটি বিষয়ে খুবই সাবধান থাকা উচিৎ – “সেটা হল পাত্রে-অপাত্রে কারো ধর্ম অথবা রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জিজ্ঞাসা করা থেকে বিরত থাকা”।
খাবার-দাবারে অনেক বাঙালি মুসলমানরা সাধারণত এখানে হালাল-হারাম যাচাই করেন। যেকোনো জার্মান অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে অ্যালকোহল আর শুকর সাধারণত থাকেই – তাই আপনি ধার্মিক হওয়ায় এসব পরিহার করতে চাইলেও, কৌশলে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের আলোচনা পরিহার করাই উত্তম।
আরেকটি প্রসঙ্গ – বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন, অথবা আরবি বা টার্কিশ দোকানে গেলেন, আপনার চামড়ার অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্ণ দেখে, দেখলেন কেউ এগিয়ে আসলো, কথা জুড়ে দিলো, কথার টানে হয়তো বুঝতে পারছেন অজার্মানীয় ভাব আছে, একটু পরেই দেখলেন হয়তো আপনার ধর্ম নিয়ে সে একটু উৎসাহী হয়ে উঠলো। আপনি যদিও বাঙালী “মডারেট মুসলমান”, তবুও জানিয়ে দিলেন তাকে যে আপনিও মুসলমান। এতেই কাজ সেরে গেলো। প্রথমে দাওয়াত দিবে হয়তো খাওয়ার, তারপরে মসজিদে যাওয়ার, এরপরে আস্তে আস্তে চলে যেতে হবে বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের ব্রাদারহুড পর্যন্ত। মাঝপথে আপনি তাদের সঙ্গ ছেড়ে দিতে চাইলে, আপনাকে হয়তো ছেড়ে দিবে, কিন্তু দেখবেন আপনাকে তারা আর সহ্যই করতে পারছে না। এই ব্যপারগুলো ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো অল্প কিছু ব্যতিক্রম হয়। কাজেই আপনি যদি “মডারেট মুসলমান” হন, তাহলে নিজেই বুঝতে পারছেন আপনার কি করা উচিৎ। সেটা হল শুরু থেকেই তাদের ধর্মীয় উৎসাহ একেবারেই দমিয়ে দেয়া অথবা পাশ কাটিয়ে যাওয়া। তাহলে বেশী ভাল সম্পর্ক না হউক, অন্তত তিক্ত সম্পর্কে আপনাকে পরতে হবে না।
বর্তমানে জার্মানিতে এ,এফ,ডি, নামে একটি রাজনৈতিক দল আছে। বেশীরভাগ উচ্চশিক্ষিত লোকজন অবশ্য এই দলটিকে সমর্থন করেন না। কিন্তু ২০১৭ এর নির্বাচনে এই দল বিস্ময়করভাবে বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই দলের মূলনীতি বোঝা অবশ্য একটু বেশ বিভ্রান্তিকর। দলের প্রধানদের একজন আলেক্সান্দার গাউলান্ড নিজেই বলেছেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান সৈনিকদের নিয়ে আমাদের গর্বিত হওয়া উচিৎ”। তাতেই বুঝা যাচ্ছে, নাৎসি ধ্যান-ধারণা তার ভিতরেও কাজ করে। আবার অন্যদিকে দেখা যায়, নিজের ঘরে আফ্রিকান এক মেয়েকে পালক নিয়েছেন এবং মেয়েটা প্রোটোস্ট্যান্ট খৃষ্টান হওয়াই তাকে গ্রহণ করার প্রধান কারণ। 😀 গাউলান্ডের কথা শুনে তাকে খৃষ্টান চরমপন্থি ভাবলেও ভুল করবেন। তার দল যদিও সমকামী বিয়ের বিরোধী, সেখানে আবার তার প্রধান সহযোগী এলিস ভাইডেল একজন লেসবিয়ান। এলিস ভাইডেলের স্ত্রীও একজন ভারতীয়, যেখানে তার দল অভিবাসীদের চরম বিরোধী। কে আবার কেমন বিরোধী সেটা বোঝাও মুশকিল। দলের কারও কথায় মনে হয়, তারা শুধু অতিরিক্ত পরিমাণে শরণার্থী নেয়ার আর এসাইলাম মঞ্জুর করার বিরোধী, আবার কারও কথায় বোঝা যায় তারা পুরোপুরি হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট। আর কারও কথায় বুঝা যায়, মুসলিম দেশগুলো থেকে কাউকে জার্মানিতে প্রবেশ করতে দেয়ার চরম বিরোধী। এক কথায় মনে হবে, এই দলের বেশকিছু ডবল স্ট্যান্ডার্ড আছে। যাই হোক, এতক্ষন ধরে এই নব্য-নাৎসি দলটিকে নিয়ে প্যাঁচাল পারার আমার অন্য উদ্দেশ্য আছে।
কিছু আগে পরেছেন আর বুঝেছেন, যে জার্মানিতেও সালাফিস্টদের ব্রাদারহুড আছে। শুধু আছে বললে ভুল হবে, এদের অনেকে রীতিমত এখানেও শরিয়াহ শাসন চায়। তাদেরকে এখানে সাধারণত সালাফিস্ট হিসেবে ধরা হয়। তো আপনিও বাঙালী “মডারেট মুসলমান”, এখানে এসেও পথেঘাটে সালাম দিচ্ছেন, সালাতে যাচ্ছেন, আর যাওয়ার সময় আরেকজনকেও ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনার বিশ্বাসের স্বাধীনতা জার্মান সংবিধান হিসেবে অবশ্যই আছে। তবুও বাঙালী ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, নিজেদের ধর্মীয় কাজ-কর্ম কিছুটা নীরবতার সাথে করার জন্য। মনে রাখবেন, হয়তো আজকের আপনার একজনের ধর্মীয় সরব উপস্থিতিই, ভবিষ্যতের অন্যান্য বাঙালী অভিবাসীদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। আগেও বলেছি, জার্মানরা নিজেদের ধর্মীয় ব্যাপারগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাক্তিগতভাবে পালন করে। বর্তমানে অতিরিক্ত পরিমাণ মুসলিম অভিবাসী আর তাদের সরব পদচারণা দেখে জার্মান অনেকেই যারপরনাই আতঙ্কিত। তাই বুঝে অথবা না বুঝেই আতঙ্ক থেকে অনেকেই এ,এফ,ডি, কে ভোট দিচ্ছে। আর এরা ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে, আপনি মোটামুটি ধরে নিতে পারেন, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী আসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণেই কমানো হবে।
নৈতিকতাঃ
বিবেকবোধ আর পারিপার্শ্বিকতা থেকে এখানকার লোকজন ভালই নৈতিকতার শিক্ষা পায়। তাই বেশীরভাগ ব্যাপারে সরল স্বীকারোক্তিকে তারা পছন্দ করে। এখানেই বাংলাদেশী কিছু অভ্যাস বা বদভ্যাস কথা প্রসঙ্গে ছলেই আসে। সেটা হল, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি। এই ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিৎ। ভারত উপমহাদেশীয় লোকজনের সম্ভবত এই ব্যাপারে বেশ দুর্নামই আছে। একটি কথা তাই ভালই মনে রাখা উচিৎ, যে কোনও কিছু কারও গবেষণা থেকে নেয়া হলে, সেটাকে সঠিকভাবে উল্লেখ করা। কোনও নতুন আইডিয়া কারও মাথা থেকে আসলে, সেটা নিজের বলে চালানোর কারও কারও অভ্যাস আছে। এটা পরিহার করা এবং প্রত্যেকতে তার প্রাপ্ত স্বীকৃতি দেয়াও কিন্তু অবশ্য কর্তব্য। ভাল গবেষণা করতে না পারলে হয়তো রেজাল্ট খারাপ হবে, কিন্তু গবেষণার চৌর্যবৃত্তি ধরা পড়লে আপনার ডিগ্রি থেকে শুরু করে পুরো ক্যারিয়ার পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
যৌনতা এবং নারীদের প্রতি মনোভাবঃ
এটি একটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা অনেকেই পাশ কাটিয়ে যায়। মানব সভ্যতার বিকাশের বিভিন্ন ধাপে, কেন যেন অধিকতর ফর্শা চামড়ার দিকেই সাধারণত মানুষ বেশী আকর্ষণ অনুভব করে। বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে আসা অনেকেরই এই আকর্ষণ থাকবে, আর এটা অস্বাভাবিক কিছুও নয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটিকে বর্তমানে জার্মানিতে বেশ অন্যভাবেও নেয়া হচ্ছে।
শরণার্থী এবং উচ্চশিক্ষার্থী – এই দুই ধরণের অভিবাসীদের মধ্যেই পুরুষ লোকের সংখ্যা অতিরিক্ত পরিমাণেই বেশী। আরেকটি মিলও আছে, এই দুই ধরণের লোকের মধ্যেই আরবি নামধারী লোকের সংখ্যাও অসম্ভব পরিমাণ বেশী। নিকট অতীতেই শরণার্থীদের দ্বারা বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা এখানে ঘটেছে। তাই, বুঝতেই পারছেন, এখানকার মেয়েরা অভিবাসী পুরুষদের নিয়ে কি পরিমাণ আতঙ্কে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্ররা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আর্থিক দিক দিয়ে শরণার্থীদের চেয়েও দুর্বল অবস্থায় থাকে। তাই গাত্রবর্ণে তো অবশ্যই, কাপড়চোপড়ে আর চলাফেরায়ও শরণার্থী আর উচ্চশিক্ষার্থী, এই দুই গোত্রকে সাধারণত আলাদা করা মুশকিল। মেয়েদের সাথে মেলামেশার অনেকেরই অনেক রকম উদ্দেশ্যও থাকে। কেউবা শুধুই সম্পর্কে জড়াতে চায়, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা হিসেবে জার্মান পাসপোর্টধারী হওয়ারও চিন্তা করে। কিন্তু যাই মাথায় থাকুক না কেন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তৃতীয় বিশ্বের নাগরিকেরা এই ধরণের ব্যাপারে পাত্তা না পাওয়াই স্বাভাবিক। তাই ইউরোপিয়ান মেয়েরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দূর থেকে গাঁড় গাত্রবর্ণ দেখলেই দূরত্ব বজায় রাখা শুরু করে।
বাঙালী ছাত্রদেরও তাই কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরিঃ
• নটি আমেরিকা আর বাস্তব জীবন এক নয়। কেউ হেসে কথা বললে অথবা চোখ টিপ দিলে অন্য কিছু মাথায় না আনাই ভাল। তারা অনেকেই নিজেদের নাৎসি পূর্বপুরুষদের কর্মকাণ্ডে অনুতপ্ত হয়ে, অন্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাবহার করে নিজেদের ভাল প্রমাণ করতে চায়।
• রাস্তাঘাটে অনেকেই অতীব আকর্ষণীয় পোশাক পরে হাটতেই পারে। কিছু স্থির দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকাও তারা প্রত্যাশা করে না, বিশেষ করে অভিবাসীদের থেকে তো নয়ই।
• কেউ হেসে কথা বললে বা সম্ভাষণ জানালে, প্রত্যুত্তরে সেভাবেই ব্যাবহার করা যায়। কিন্তু এর বেশী কিছুতে না যাওয়াটাই সাধারণত বুদ্ধিমানের কাজ। নয়তো পরবর্তীতে হয়তো আপনার তার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলাই মুশকিল হয়ে যাবে।
• জার্মানদের কিছুটা আনফ্রেন্ডলি মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে তারা নিজেদের ক্ষুদ্র সার্কেল নিয়েই থাকতে পছন্দ করে। নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে ইন্টারনেট এ তথ্য আদান-প্রদান করতে অনেকেই বেশ সতর্ক থাকে। ফেসবুক, ইমেইল অ্যাড্রেস, ফোন নাম্বার পুরুষ জার্মানদের কাছ থেকেই অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া মুশকিল। সেখানে বিপরীত লিঙ্গ থেকে চাওয়ার ব্যাপারটা কেমন হবে বুঝতেই পারছেন।
• পথে চলার সময় মাতাল কোনও মেয়েকে দেখলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই ভাল। আপনি যদি সাহায্যই করতে চান, তাহলে ১১২এ কল দিতে পারতেন। নিজ থেকে কোনও সাহায্য করতে যাওয়ার আগে একবার ভেবে দেখা ভাল, এখানে আপনি নিজেই নিরপরাধ হয়েও আসামী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।

 

স্থায়ী বসবাস ও নাগরিকত্বঃ
জার্মানিতে আসা আমাদের সবারই এখানে স্থায়ী বসবাস আর নাগরিকত্ব নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনায় থাকি। ব্যাপারটা ওপেন সিক্রেট হলেও, কেন যেন অনেক জার্মানের এই ব্যাপারে একটু ঋণাত্মক চিন্তা-ভাবনা আছে। তাই আপনি যদি পড়াশুনার জন্য আসেন, তাহলে বলা ভাল যে আপনি পড়াশুনাই করতে এসেছেন। বাকি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা অন্তত আম-জার্মানদের সাথে আলোচনা না করাই ভাল। বুঝতেই পারছেন, আত্মসম্মানের ব্যাপার।
বিবিধঃ
আরও কিছু বিষয় –

• স্মার্টফোনে ছবি নেয়ার ক্ষেত্রে জার্মানদের সেখানে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধ্য না করা। নিজেদের জীবনকে তারা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে বেশ দুরেই রাখতে চায়। তাই যেখানে সেখানে তাদের ট্যাগ দেয়া থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল।
• রাস্তাঘাটে অতীব আওয়াজে সালাম না দেয়া।
• বারবার থুথু যত্রতত্র না ফেলা।
• পথচারী বা বাইসাইকেল চালক হিসেবেও ট্রাফিক আইন মেনে চলা।
• শরীরে বা কাপড়ে মশলার বা যে কোনও দুর্গন্ধ নিয়ে রাস্তায় বের না হওয়া। প্রতিদিন একবার গোসল করে খুশকিমুক্ত মাথা আর দুর্গন্ধমুক্ত জামা নিয়েই বাহিরে যাওয়া ভাল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অবশ্যই।
• নিজের এপার্টমেন্ট-শেয়ারে, অফিসে, বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবখানেই টয়লেট ব্যাবহারে সাবধান থাকা উচিৎ। কমোডের পাশে একটি ব্রাশ থাকে। সেটি আপনার পরেরজনের ব্যাবহারের জন্য নয়, বরং আপনারই জন্য। দুর্গন্ধের উৎস আর চিহ্নমুক্ত টয়লেট বজায় রাখা অতীব জরুরী।
• নিজের এপার্টমেন্ট-শেয়ারে রান্নাঘরকে ময়লা, পোকামাকড় আর দুর্গন্ধমুক্ত রাখা।
উপরের সব ব্যাপারগুলি নিজের আর আশেপাশের লোকদের উপলব্ধি থেকে জানতে পেরে লিখা হয়েছে। ব্যক্তিভেদে অভিজ্ঞতায় অনেক তফাৎও থাকতে পারে। আর অবশ্যই কারও প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লিখা এটি নয়। গঠনমূলক সমালোচনা স্বাগতম।

mm

By A. Kazi

Stress Engineer, Research & Development, Renowned Wind Tubine Manufacturer

2 thoughts on “Intercultural misunderstanding – আন্তঃসাংস্কৃতিক ভুল-বুঝাবুঝি – দেশভেদে দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা”
  1. অস্তিত্ব হারিয়ে কেউ বীর হতে পারে না…… পর সব সময়ই পর, সেটা যতই আকর্শনীয় বা কৌতুহলবশতই হোক… জাতীসত্বায় বিচ্ছিন্নতা একটি স্ফুলিঙ্গ মাত্র,সে বাচে কিন্তু মরে মরে..তার উজ্জলতা নাই বললেই চলে..আর কেউ যদি বলে সেটি নিছক নিজকে শান্তনা দেওয়া….. জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ

    1. I was talking about ‘nationalism’. Not about ‘patriotism’. You misunderstood.

      I saw some Bangladeshis, do demonize any Pakistani or Indians if they see in front of them. A man’s quality, first of all, not his nationaility, but he himself. We forget that most of the time. It can be defined for sure as ‘nationalism’, which is a form of extremism.

Leave a Reply to ashraful islam Cancel reply