নিজের বয়স যেমন যৌবন পার হয় মধ্যমের দিকে ছুটলো, অন্যদিকে নিজের Facebook এর বয়স আট বছর ছুই ছুই। তার মানে গড় বয়সের অর্ধেক সময় পার করেছি, আর তার এক-চতুথাংশ তরুন অর যৌবন সময় Facebook নামক এক virtual  জগতে। এই আট বছরের প্রথমে বলবো   কিছু hypocrite এর গল্প……

১। ধরুন, আশিক এবং রবিন দুইজন খুবই ভালো পরিচিত, বন্ধু বলা যায়। আবার ধরুন,  রবিনের আবার কামরুল নামক জনৈক বাক্তি বিরাট ক্ষতিসাধন করেছে,  রবিনের লাইফটাকে কামরুল নিরমেশ করে ফেলেছে, তার স্বপ্নগুলো চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলেছে যার সবটুকু আশিক জানে। কিন্তু এখন রবিন দেখলো আশিকের সাথে কামরুলের দহরম মহরম সম্পর্ক । আশিক আর কামরুলের ছবিতে ফেসবুক সয়লাব। তাদের এইসব গলায় গলায় সম্পর্ক ফেসবুকে দেখে দেখে নিশ্চয় রবিনের ভালো লাগবে না। রবিন ভাববে হলে আশিক আসলে তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অভিনয় করছে।

আমার অবস্থা হল এখন রবিনের মতো। Varsity তে আমার ক্ষতিসাধন করা কথিত ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এক শিক্ষিকার সাথে আমার কোন এক সহপাঠীর সয়লাব হওয়া ছবি ও স্ট্যাটাস দেখে নিজেকে খুব খুদ্র মনে হয়। নিজের কষ্ট নিজেকে চাপতে হয়। আমার মনে হয় অনেককে এই রকম ঘটনার সম্মুখিন হতে হয়েছে।

২। ধরুন,  অতীতে কোন এক বন্ধুর হাড়ির খবর আপনি জানেন। হটাত আপনার বন্ধু সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মত যোগ্যতা পেল। এখন সে বন্ধু ফেসবুকে post শুরু করলো, সে অতীতে ধোঁওয়া তুলশি পাতা ছিল, সে ছিল a piece of ideal, তার অতীত লাইফে কোন negative event নেই, তার চরিত্রের উপর কেউ কালি ছড়াতে পারবে না। জনগন তার স্ট্যাটাসগুলো হাওয়ার মত গিলছে। আসলে জনগন তাকে গিলছে না, তার position টা দেখে গিলছে। এসব দেখে, আপানর কাছে তখন কেমন লাগতে পারে? আপনার কাছে মনে হবে এগুলা সব ভাঁড়ামি or hypocrisy ছাড়া কিছু নয়।

৩। ধরুন,  চারবছর আগে আপনার কোন কোন বন্ধু অথবা বান্ধবী প্রেমের সাগরে হাবুডুবু। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বন্ধু তার প্রেমিকাকে নিয়ে ফেসবুকে আপডেট,  hang out এর পিকচার দিতে দিতে ব্যতিব্যস্ত। জান, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন শেষ, তুমি আমার বউ এই ধরনে স্ট্যাটাসে একসময় ছিল তাদের ফেসবুক সয়লাব। কিন্তু ধরুন গত দুই বছর ধরে ফেসবুকে আপনার সেই বন্ধুটি আবার সেই একই রকম স্ট্যাটাস প্রসব করা শুরু করলেন, তবে সেই চার বছর আগের মানুষটার সাথে না,  প্রতিবছর নতুন কোন মানুষের সাথে। তখন আপনার কেমন লাগতে পারে? আপনার কাছে মনে হবে ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়। স্রেফ hypocrisy । বাক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া এক বান্ধবী এবং এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন তোরা এরকম করিস ? দুজনের এককাট্টা উত্তর,  ধুর বেটা এগুলা বাচ্চাকালের ব্যাপার, একজন না থাকলে কি time pass হয়।  না আমি নির্বাক।

এবার আসি, Facebook celebrity দের কথা………

১। আমি হিসাব করে দেখলাম, বাংলাদেশের respect এ ফেসবুক celebrity হওয়া খুবই সোজা । আপনি যখন কিছুটা প্রতিষ্ঠিত হবেন, নিজের wall এ গলাবাজি করবেন, বিভিন্ন Facebook গ্রপে গলাবাজি করবেন, দেখবেন আপনার friend request এর সংখ্যা হু হু করে বেড়াবে। নিজের কথায় বলি, অস্ট্রেলিয়াতে আসার আগে যতনা friend ছিল, অস্ট্রেলিয়াতে আসার পর তার ৫-৬ গুন বেড়ে গেল। গত বছর higher study নিয়ে কিছু লেখালেখি করতাম। একসময় এত request আসা শুরু করলো, যে unknown friend request accept করা বন্ধ করলাম। কিছুদিন পর লেখালেখি করাও বন্ধ করলাম। ভাবলাম, এত request আসার একমাত্র কারন আমার অস্ট্রেলিয়াতে থাকা, অন্য কিছু নয়, আমি যদি বাংলাদেশে থাকতাম কখনো কেউ আমার বস্তাপচা লেখা ভক্ষণ করতো না।

In words, Position sucks celebrity. আর এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে সমাজে সদ্য অথবা নব্য প্রতিষ্ঠিত কিছু মানুষ, যারা, যাদেরকে সমাজ যে কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা না করে,  ফেসবুক celebrity হওয়ার নিরন্তন চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে,  like এবং share কামানোর জন্য ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্ট্যাটাস প্রসব করছে ।

২।  এবার কথাটি কিছু আপুদের প্রতি। বিধাতা আপনাকে যে চেহেরা দিয়েছেন, তার জন্য বিধাতার কাছে সন্তুষ্ট থাকেন না। কেন সয়লাব করবেন নিজের DSLR মার্কা ছবি দিয়ে ? শুধু celebrity হওয়ার ইচ্ছা? বিধাতা আপনাকে অনেক সুন্দর চেহেরা দিয়েছেন। শুধু শুধু artificial করার কি দরকার? যদি নিজের ছবি না দেওয়ার ইচ্ছা থাকে দিয়েন না। DSLR picture দিয়ে নিজেকে সুন্দর প্রমান করার কেন এই অভিনব এবং নোংরা প্রতিযোগিতা ? কেন নিজের বাক্তিত্তকে অপমান? ভালো না, আপনি এই সব ছবি দিয়ে হচ্ছেন celebrity……

৩। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যেসব মানুষ ফেসবুক celebrity তাদের অধিকাংশই নিজেকে ভাবেন মহাজ্ঞানী। তারা ভাবেন, তারাই দুনিয়ার সবজান্তা। কিন্তু তাদের এসব লাফঝাপ ফেসবুকের keyboard পর্যন্ত সীমাবদ্ধ । তারা এতটাই ঘরকুনো যে, পাড়ার মোড়ের দোকানটা পর্যন্ত চিনে না। তাদেরকে কখনো কোন সৃজনশীল কাজে ডাকবেন, পাবেন না,  কোথাও কোন যৌক্তিক কাজে ডাকবেন, তাও পাবেন না । কিন্তু  উনারা কিন্তু Facebook এ ঠিকই দুনিয়া উদ্ধারে ব্যস্ত ।

Facebook এ ফ্রেন্ডসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া আসলে কারো জন্য কিছুটা শাখের করাত। আপনি কারো friend request accept করলেন না, ওই মানুষটি ভাববে, আপনি part এ আছেন। কারো msg এর দেখলেন না, ওই মানুষটি ভাববে আপনার অহঙ্কারের সীমা নেই। ভাই এত ভাবাভাবির আগে কখনো কি ভেবছেন ওই মানুষটির কথা যে সে কোন পরিস্থিতিতে আছে ।

বর্তমানে, বন্ধুদের কোন আড্ডা হচ্ছে, তার অধিকাংশ সময়ে আলোচনার বিষয়বস্তু Facebook. আপনি মনের দুখে কোন একটা স্ট্যাটাস দিলেন,  আর আপনার friend list এর আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, বান্ধবী, প্রেমিকা, সিনিয়র, জুনিয়র, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অটাকে নিবে বিভিন্নভাবে। কেউ মজা করবে, কেউ উপহাস করবে, কেউ তিলকে তাল করবে।সেটা just এই ভার্চুয়াল জগতে। কেমন যেন হৃদ্যতার অভাব। আসলে  আমাদের জীবন যেন ফেসবুক নামক ভার্চুয়ালজগতে বন্ধী ।
যা হোক,  চিন্তা করে দেখলাম, কিভাবে তথাকথিত Facebook hypocrites and celebrities থেকে দূরে থাকা যায়। যেহেতু উনাদের unfriend করা আমার পক্ষে অসম্ভব, আর তা অন্য অর্থে নিজেকে নিচু করা । তাই ভাবলাম অন্য আরেকটা ID খুলবো খুলে সেখানে ১০-২০ জন friend add করবো। এভাবে ভার্চুয়াল জগতে ২৫০০/৩০০০ তথাকথিত Facebook  ফ্রেন্ড এর চেয়ে মানুষের জীবনে আসলে প্রকৃত ১০-২০ জন প্রকৃত বন্ধু কিংবা well wisher প্রয়োজন।

নিবেদক-

সায়েদুল মোরসালিন

মানসিক কামলা

University of New South Wales, Australia

 

mm

By Morsalin

Research Assistant at Macquarie University, Australia.

Leave a Reply