একমাস হলো আমার জার্মানিতে আগমন। অনেক দিন থেকেই ভাবছি গ্রূপে আমার এই কয়দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। তাই লিখতে বসলাম আজ। মতামতের জন্যে অবশ্য লেখক দায়ী নহে।

১. খাবার দাবার: রান্নাবাড়া আমি জীবনেও করি নাই। তবে আমার ভাগ্য ভালো যে ভেতো বাঙালি বলতে যা বুঝায় আমি আসলে ঠিক তা না। জার্মানিতে অনেক ধরণের রুটি পাওয়া যায় আর রুটি আমার অন্যতম প্রিয় খাদ্য। তাই তেমন সমস্যা হয়নি শুরুতে। এখন অবশ্য রাইস কুকার কিনে রান্না বিষয়ক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। আর দামের কথা যদি বলি তাহলে জার্মানিতে খাবারের দাম সস্তাই বলা যায়। যেমন দুধ এর লিটার বাংলাদেশী টাকায় ৫৫ টাকা। তবে শাকসবজি আর ফলমূলের অনেক দাম। অবশ্য সামারে শুনেছি দাম কমবে।
এখানে মসলা, ডাল, চাল, সবজি সবই পাওয়া যায়। তবে হালাল মাংস পাওয়াটা অবশ্য একটু কষ্টকর। টার্কিশ দোকান ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না।

২. আবহাওয়া: এই একটা জিনিস জার্মানিতে আমার একদমই পছন্ধ হচ্ছে না। রোদের দেখা পাওয়া দুস্কর। এই একটু রোদ তো এই আবার মেঘ। আর চরম ঠান্ডার মধ্যে যখন বৃষ্টি শুরু হয়, এর থেকে ভয়ঙ্কর জিনিস মনে হয় পৃথিবীতে নাই।

৩. সিঁড়ির বাতি: জার্মানরা খুব এনার্জি সচেতন। আমি প্রথম যেই বাসায় উঠেছি, দেখি যে সিঁড়িতে বাতিজ্বলে না। আমি ভাবছি এটাই মনে হয় নিয়ম এখানে। অন্ধকারেই উঠানামা করছি প্রথম কয়দিন। পরে অবশ্য দেখলাম এদের প্রতি তলায় একটা ট্রগল সুইচ আছে। ওটা চাপলে কয়েক মিনিটের জন্যে বাতি জ্বলে। আপনার উঠা-নামা শেষ, বাতিও অটোমেটিক অফ। [রাস্তার পাশে শোরুমগুলাতে অবশ্য বন্ধ হয়ে যাবার পরেও বাতি জ্বলে দিনরাত ২৪ ঘন্টা। তখন মনে হয় এনার্জি খরচ হয়না আর কি]।

৪. ট্রান্সপোর্ট: এই একটা ক্ষেত্রে মনে হয় জার্মানি বিশ্বসেরা। বাস, ট্রেইন সব মিনিট ধরে চলে। পরের বাস কখন আসবে মোবাইল এপে দেখে নিলেই হয়। ট্রেন অবশ্য মাঝে মাঝে ২-৩ মিনিট লেট করে। এই নিয়ে এরা দেখি হাসাহাসিও করে আর বলে যে ট্রেনকে বিশ্বাস নাই।

৫. সার্ভিস: এই জিনিস জার্মানিতে আসা করাও দুরাশা। জার্মানরা ইঞ্জিনিয়ারিংএ পৃথিবীতে এক নম্বর। কিন্তু সার্ভিসে পৃথিবীতে কত নাম্বার তার জন্যে আসলে পৃথিবীর দেশের সংখ্যা গুনে দেখতে হবে। আপনি ইমেইল করলে এরা পড়েও দেখবে না। আপনাকে ফোন দিতে হবে অথবা স্বশরীরে হাজির হতে হবে। আবার ব্যাংকে একটা ট্রানসাকশান করতে এদের একদিন লাগে, যেই কাজ বাংলাদেশে করতে আমার ৫ মিনিট লাগতো।

৬. কাপড়চোপড়: যা পারেন ভাই বোনেরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসেন। এখানে এসেও মিন কিনবেন, শুধু দাম তিনগুন দিবেন আর কি।

৭. জার্মান ভাষা: সবাই দেখি উপদেশ দেয় জার্মানি তে আসার আগে টুকটাক ভাষা শিখে আসলে নাকি দৈনন্দিন জীবনে কাজে দেয়। আমার অবজারভেশন হচ্ছে এখানে সবাই ইংলিশ খুব ভালোই পারে। তাই কোথাও আটকানোর কোনো কারণ নাই। ভাষার প্রয়োজনীয়তা আসলে টাকার প্রবাহের উপর নির্ভর করে। ধরেন আপনি কিছু কিনতে গেলেন, আপনার টাকা যেহেতু ওদের পকেটে যাবে আপনার সাথে সবাই মধুর ইংলিশে কথা বলবে। কিন্তু যখন আপনি টাকা কামাতে যাবেন [চাকরি খুঁজবেন] তখন অনর্গল জার্মান না জানলে কর্ম খালি নাই।

পরিশেষ: আমি যেই শহরে আছি [] এখানে আমিই মনে হয় একমাত্র বাঙালি। আমার ইউনিভার্সিটি তে ম্বা ছাড়া অন্য সব কোর্স জার্মান ভাষায়। তাই মনে হয় অন্য কোনো বান্দার পদার্পন হয় নাই এখনো। তবে একটা জিনিস ভালো লাগে যে বাংলাদেশ এখন আর অপরিচিত কোন দেশ না। পৃথিবী নামক গ্রহে যারা থাকে তারা সবাই জীবনে একবার হলেও বাংলাদেশে তৈরী জামা গায়ে চড়িয়েছেন।

নিজেকে বোঝাতে হবেঃ ” আমি পারব!” – হাল ছাড়া যাবে না

আমার জার্মান দর্শন

স্বাদ-আহ্লাদ আর খানাদানা ৯: বিরিয়ানির ফাকিঝুকি

স্বাদ-আহ্লাদ আর খানাদানা ৮: গরিবী হাল-নবাবি চাল

mm

By Nizam Uddin

Now doing internship in corporate purchasing at Robert Bosch GmbH . Completed MBA from Hochschule Pforzheim, Baden-Württemberg, Germany. Previously completed BSc in Computer Science from BRAC University and MBM from BIBM. Worked as PO & Branch Manager in Modhumoti Bank Ltd, Bangladesh.

One thought on “দেশের বাইরে জার্মান দেশ”
  1. I wanna know a bit more about clothings. You said that, there environment is very cold. So I want to know, Is normal hot clothings is enough or I need super hot clothings?

Leave a Reply