রাত একটা, কাজ সামলাতে গিয়ে সময়ের কূল-কিনারা পাচ্ছিনা তবু লিখতে বসা আমাদের কিছু কথা। আমরা কারা? অল্পকিছু মানুষ যারা প্রত্যক্ষভাবে ছিলাম এবং এখনো আছি একটি ঘটনার সাথে। “পাছে লোকে কি বলে”, “পাছে কেউ যদি ভুল বোঝে”- এমন অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে অনেক চিন্তার মাঝে লেখাটি লিখতে বসা। আমাদের অনুরোধ থাকবে, এই লেখাটিকে নিজেদের নামকে ফলাও করে প্রচারের চেষ্টা হিসেবে না দেখে বরং এমন অবস্থায় আসলে কি ঘটে তার উদাহরণ হিসেবে নেবার জন্যে লেখা। ঘটনাটির সাথে আমি সরাসরি জড়িত থাকায় এই লেখাটি লিখবার দায়ভার নিলাম।


ঘটনার শুরু হয় পরিচয় দিয়ে- হাসনাইন এবং কুতুব ব্রেমেনের ছাত্র, আসে সুজনকে ব্রেমেন এয়ারপোর্ট থেকে আনতে-গতবছর, যখন সুজন বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে প্রথম আসে। একদিন সুজনের শরীর ভালো না জানতে পেরে হাসনাইন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। শুরু হয় এই ডাক্তার, সেই ডাক্তার এবং ঘোরাঘুরি। ধরা পরে টিউমার যার অপারেশন হয়। এর মাঝে হাসনাইন চলে যায় দেশে, ধীরে ধীরে ব্যাপারটি বেশ খারাপের দিকেই এগোয়। দেশ থেকে ফিরে হটাৎ এক দুপুরে অজয় এর কল পায় হাসনাইন “খুবই ইমারজেনসি একটু নিচে নামেন”. অজয় ও কুতুব ওর ইউনিভার্রসিটি এর বন্ধু যারা সুজন এর টিউমার র অপারেশনের দিনগুলাতে খুব কাছেই ছিল। অজয় মাএই ডা: কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়া ফিরল সুজনের সাথে ডা: বলেছে টিউমার সারানোর পর থেকে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। এখন কি উপায়? হাসনাইন, অজয় চিন্তা করে ডা: সাথে আরো কথা বলতে যাবে আরো বিস্তারিত কিন্তু আজকের দিনে সুজনের মন ভাল করার জন্য নেট থেকে মুরগী কিনে একটা খিচুরী পার্টি করা হয় এবং কুতুবকে ও ডাকা হয়। হাসনাইন, অজয়, কুতুব মিলে ডা: সাথে কি কি কথা বলব তা ঠিক করা হয়। ডা: এর সাথে কথাবলে হাসনাইন আর অজয় এবং বুজতে পারে ওর ক্যান্সার অনেক গভিরে ছরিয়ে পরেছে। কিছুদিন চিকিৎসা চলে। আর এই খবর ব্রেমেনে বর ভাইদের জানানো হয়। দুইমাস পর ডা: ফাইনাল রিপোর্ট দেয় যে তাদের কাছে আর অফিসিল চিকিৎসা নেই সুজন চাইলে হয় হ্যানোভার অথবা হামবুর্গে ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ক্লিনিকাল রিসার্চ সেন্টারে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। শুরু হয় একা হাসপাতালে সুজনের নিঃসঙ্গ জীবন। হামবুর্গে প্রথম দিন আনন্ত এবং সুভ যায় এর পর মইন যায় চার দিন, অজয়, কুতুব, হিমেল ও যায় সুজনের সাথে ক্লিনিকাল ট্রায়াল জন্য। শেষ এর দিন হিমেল এবং মঈন কে ডা: বলে সুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে রাখার কথা। হামবুর্গে গেলে পুরা দিন চলে যেত তার পরও বন্ধুর পাশে থাকার জন্য এদের মন সবসময় ব্যকুল থাকতো। ৩০ শে জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয় সুজন।


সুজন একদিন কল করে হাসনাইন এবং আজয়কে বলে যে অনন্ত কে বলতে হোমিও ডা: এর সাথে কথা বলতে। অনন্ত কথাও বলে রাখে। রাহুল দাদার বাসায় সবার দওয়াত ছিল ওই দিনই হাসনাইন সুজনকে জীবিত দেশে পাঠানোর বিসয়টা তোলে ব্রেমেন এর বর ভাইদের কাছে। ওই তারেক ভাই, লিমন ভাই, রাহুল দাদা, হিমেল, আতিফ, সাহাব, সাব্বির, রাকিব,পারশ, সুভ, অনন্ত ও আরো আনেকে বিষয়টা নিয়ে কথা হয়। কিন্তু কোন সমাধান এ অসতে না পেরে পরে আবার বসার সিদ্বান্ত হয়। হাসনাইন এবং অজয় সুজনের সাথে কথা বলে বুজতে পারে ওকে তারাতারি দেশে পাঠানো দরকার। এমন সময় ব্রেমেনের বাংলাদেশি সমাজকে আবার জানানো হয় এবং জীবিত অবস্থায় দেশে পাঠানোরও পুন চেষ্টা করা হয়। সমস্যা যেটা হয়, বাস্তবে এই আলোচনা সভায় ডা: রয়, লিমন ভাই, মুস্তাফিজ, সান্ত, , হাসনাইন ছাড়া কেউ উপস্তিত ছিলেন না কারন সবার পরিক্ষা চলছিল। সবথেকে বড় যে দরকারটি ছিল, প্রশ্ন করা- আমরা কিভাবে একসাথে বিষয়গুলোতে সবাই একসাথে দ্বায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারি। একলা চলরে নীতিতে শুরু হয় গুটি কয়েকজনের পথ চলা। ওই দিন হাসনাইনরা চিন্তা করে – “আমাদের সুজনকে দেখতে যাওয়া উচিত এবং ডা: এর সাথে শেষ কথা বলা উচিৎ”। ব্রেমেন থেকে গ্রুপ টিকেটে একসাথে হ্যামবুর্গ গেলে টাকার খরচটা কম হয় বলে যারা যেতে চায় সব এক সাথে গেলে ভাল হয় তারপর হাসনাইন,মুস্তাফিজ, সান্ত, আতিফ একসাথে সুজনকে দেখতে যায়। অবস্থার অবনতি ঘটছে বলে হাসপাতালের ডাক্তাররা প্রশ্ন করে আত্মীয় স্বজন কে আছে জার্মানিতে যার সাথে কোনো অঘটন ঘটলে যোগাযোগ করা যাবে। হাসনাইন এবং মুস্তাফিজ কোন কিছু চিন্তা না করেই মানুষ হিসেবে দায়ভার গ্রহণ করে। সুজনের পরিবারের সাথে ভিডিও কল এর মাধ্যমে তার শেষ কথা বলায়া দেয় ওরা। মেসেজ থ্রেড তৈরী করে হাসনাইন “সাপোর্ট ফর সুজন” নাম দিয়ে। কথা ওঠে, সুজন আজকে যদি এই পোস্ট দেখে সে কি মেনে নিবে? এমন নানান তর্কের মাঝে গ্রুপের পুনরায় নামকরণ করা হয় “সুজন”। গ্রুপে হাসনাইন জানায় কেউ যদি তাকে দেখতে যেতে চায় তা হলে যেন আজকেই যায়। কারন ড: জানাই য়া দিছে আজকে রাত পর্যন্ত যদি নাও বাচতে পারে। রানা, কুতুব, অজয়, সাদ, রেজা, তানভির, মঈন, আশরাফ ও আরো অনেকে ওই বিকালে সুজনকে দেখতে যায়।


শুরু হয় নানান কথাবার্তা আর মতবিনিময় তবে ফলাফল শুন্যের কোঠায়। না টাকার ব্যবস্থা হয়েছে না কেউ জানে এর পরে কি অপেক্ষা করছে সামনে। সুজনের কথা জড়িয়ে এসেছে, হাত-পায়ে পানি চলে এসেছে, তবে সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এমন সময় আবার মুরুব্বী গোছের সবাইকে আলোচনা করার হয়। এমনি এক সময় হিমনকে অ্যাড করা হয় এই আলোচনা পোস্টে যার পর জার্মান প্রবাসের বাকিদের সাথে হিমন আলোচনায় বসে। আমরা প্রথমে কমিউনিটির কেউ আমাদের অনুরোধ না করাতে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করা উচিত। আমি ছিলাম বিপক্ষে, বলেছিলাম-“এত মানুষ আছে প্রয়োজনে আমাদের জানাবেই”। আনিস আমার কথার প্রতিবাদ করেছিল এই বলে- “আপু মতামত দেবার অনেকে থাকবে কিন্তু কাজ করার কেউ থাকে না। আমাদের কথার প্রতি মানুষের কিছুটা বিশ্বাস আছে- আপনি বিষয়টাতে ইতিবাচক মতামত দেন। আসলে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা জানবার জন্যে ঠিক করি শনিবার, ৪.০২.২০১৭ তে রওয়ানা দেব হামবুর্গের উদ্যেশ্যে কিন্তু শুক্রবার রাতে সুজনকে ক্লিনিকালি ডেড ঘোষণা করা হয়।


শনিবার সকাল ৮.৫১ তে হাসনাইন কল পায় সুজনের ডা: কাছ থেকে। সুজন কিছুক্ষন আগে (ভোর সারে চারটা) আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। সায়ীদ,শাহনূর, সুজনের ব্যাচের একজন ভারতীয় সান্হিক; আর ঘানার এরিক গিয়েছিল সেদিন তাকে দেখতে। হাসনাইন রানা, হিমন এবং আমাকে সাথে সাথে বিষয়টা জানায়। শুক্রবার রাতে চিন্তা করে দেখলাম, “এতদিন কথা হচ্ছিল এক মুমুর্ষ রোগীর আর এখন কথা হচ্ছে এক মৃত ব্যক্তির”। মতামত দেবার আর সময় নেই, সময় এখন কাজে নামবার। হাসনাইনকে তথ্য জানানো হয়েছিল কোন এক সূত্র থেকে ১৫০০ ইউরো খরচের, সেই খরচের এক ভিন্ন তথ্য আমি পেলাম ৬৫০০ ইউরোর। সবাইকে বোঝালাম, ১৫০০ ইউরো বাস্তব সম্মত নয়। এখান থেকে প্লেনের খরচ ছাড়াও বিশেষ কফিন, প্রিসার্ভেটিভ এমন কিছু খরচ আছে এবং জার্মানিতে পেপার ওয়ার্ক আছে যা আমরা ঠিকমতন কেউই বুঝিনা। বোঝবার কথাও না কেননা মৃত্যু এমন কোনো দৈনন্দিন ঘটনা নয়।


শেষ পর্যন্ত হিমনের কাঁধে দায়িত্ব দেয়া হলো সুজনের অবস্থার কথা মানুষকে জানাবার জন্যে। (সেই পোস্টটি পড়তে চাইলে ক্লিক করুন) 3সেই সাথে পেজ এ থাকবে প্রতিঘন্টায় বা যে সময় খবর আসে, সেই সময়ের আপডেট। চিন্তা করে দেখলাম, যা হবার তা হয়েই গেছে আর টাকার আশায় কাজ আটকে রাখা যায় না। যা থাকে কপালে এই ভেবে পোষ্টে বলেও দেয়া হলো যে টাকা সোমবার সকালের পরে পাঠাবেন না। ঘোষণাটি দেয়া হয়েছিল ছুটির দিনে তাই অনেকে অনলাইন ট্রানজেকশ নাও করতে পারেন তাই সোমবার সকাল পর্যন্ত দিতে বলা হল। সবাই যে যার অবস্থান থেকে শুরু করে দিলাম কাজ। শুরু হলো ফোন নম্বরে কল আসা এবং সেইসাথে মানুষের আন্তরিকতা। এর মাঝে আর এক বিপদ, মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে মাহিনের যোগাযোগ। মন্ত্রী মহোদয়ের ফেসবুক পোস্ট অনেকেই শেয়ার দেয়া শুরু করলেন গ্রুপে।

শুরু হলো পাল্টা প্রশ্ন- সরকার টাকা দিচ্ছে তো আমরা আবার কেন? অনেক কষ্টে বোঝানো হলো যে আমরা আসলেই কোনো আশ্বাস পাইনি। মাহিনকে বলা হলো মন্ত্রী মহোদয়কে প্রশ্ন করতে- যদি এমন সাহায্য দেয়াও হয়, কতদিন সময় লাগতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর আসে, ৮-৯ কর্মদিবস। এই কথাটিই মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে যদি টাকা এসেও পরে তবে দেরী হবে। এটি কিন্তু কারো দোষ নয় তবে এই সমাধানের জন্যে বসে থাকা বাস্তব সম্মত নয়।


ইতিমধ্যে দুটি সূত্র থেকে ২২০০ ইউরো এবং ২৫০০ ইউরো খরচের দুটি তথ্য আমাদের হাতে আসে। আমি বারবার প্রশ্ন করছি, সব ঠিক থাকবেতো? টাকা কম হলে বিপদে হবে না তো? এমন সময় একটি ফোন কল আসে হিমনের কাছে, নাম তার আসিফ ইকবাল ভূইয়া। হিমন আমাকে কল দিয়ে বলে আপু কি করব? এক আসিফ ভাই ফোন করে কোন CLS কম্পিউটার এর কথা বলে। ওয়েবসাইটতো আছে দেখলাম কিন্তু ওনারা সব দায়দ্বায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন। আমি কল দিলাম, বুঝে উঠতে পারছিলাম না আসলে কি শুনছি। জীবিত মানুষকে মানুষ সাহায্য করে না আর এই কোন পাগল ভাই যে আমাদের পোস্ট দেখে নিজেরা ফোন দিয়ে বলে “ আমরা দ্বায়িত্ব নিতে চাচ্ছি কারণ এই রকম ঘটনার সাথে আমাদের পরিচয় আছে”! কথা বললাম হাসনাইনের সাথে, দ্বিধা কাজ করেছে তার পরেও রাজি হয়ে গেল। বললাম ব্যাকআপ রেডি রাখো, কে না কে চিনি না শেষ মুহুর্তে কাজ না হলে বিপদ। এরই মাঝে মিউনিখ এবং হ্যামবুর্গ থেকে আসল কিছু সাহায্যের আশ্বাস। হঠাৎ করেই যেন বিশ্বাসটা বেড়ে যেতে থাকলো মানুষের প্রতি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী cls কম্পিউটার প্রতিষ্ঠাতা, দেওয়ান সফিকুল ইসলাম ভাই এর কাছে তার ফোনের কথা কিছুটা হলেও অবিশ্বাস করেছি। এর কারণ ওই বিপদের সময় সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন করা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ হচ্ছিল না, কোথাও কোন ভরসাও হচ্ছিল না।


সবাই চেষ্টা করলাম ঘুমানোর কেননা হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে সোমবার সকাল আটটায় থাকতে। ফলোআপ করলাম যাতে হাসনাইন নিজের পাসপোর্ট এবং অনুমতি পত্র সাথে নিয়ে যায়। সোমবার সকাল আটটায় হাসনাইনের কল আসল- “আপু মরদেহ গ্রহণ করার জন্যে ফির্মার লোক এসে বসে আছে, আমরাও (মুস্তাফিজ, হিমেল, অজয়,আসিফ) এসে বসে আছি। সুজনের দেহতো রিলিজও করে না আর বলেও না কেন করছে না। শুরু হল ফোনের পর ফোন, শেষ পর্যন্ত জানা গেল হাসপাতালে বোর্ড বসেছে তদন্ত করবার জন্যে এবং বিষয়টিতে একদিন থেকে ছয়দিন সময় লাগতে পারে। কোনো উপায় নেই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবার, বুদ্ধি দিলাম বাংলা পদ্ধতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলতে “ভাই পরীক্ষা আছে আর কিন্তু আসতে পারুম না, যাই গিয়া”, এর মাঝে সেই কোম্পানির লোকও ফেরত চলে গেল আজকে মৃতদেহ পাওয়া যাবে না বলে। ইতিমধ্যে এম্বাসি থেকে কল আসাতে আমিও বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম যে অন্তত দূতাবাসের কাজতো দ্রুত হবে। এর মাঝেই খবর আসল, মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ***ঘটনার সাথে একটু হিসাব মিলিয়ে দিতে চাই, লাশ মর্গে পাঠিয়ে টাকা তোলা হয়নি! বিশেষ মানুষজনের পোস্ট পড়ে এই স্বস্তা ধাঁচের কথাটা ঠিক মেনে নিতে পারলাম না।


***ঘটনার সাথে একটু হিসাব মিলিয়ে দিতে চাই, লাশ মর্গে পাঠিয়ে টাকা তোলা হয়নি! বিশেষ মানুষজনের পোস্ট পড়ে এই স্বস্তা ধাঁচের কথাটা ঠিক মেনে নিতে পারলাম না। দুঃখিত মাননীয় লেখক-আমরা লাশ নিয়ে কাজ করিনি, করেছি সুজনকে নিয়ে। যাইহোক, মূল কথায় আসি কাদা ঘাঁটাঘাঁটি বাদ দিয়ে। মর্গে মরদেহ পাঠানো হয় সেখান থেকে স্টান্স-আমট থেকে ডেথসার্টিফিকেট ইস্যু করতে হয়। সুজনের ব্যাপারে বিষয়টা আর একটু জটিল ছিল কারন রোগের কারনে মৃত্যু হওয়াতে গেজুন্ডহাইট-আমট থেকেও ছাড়পত্র নিতে হবে। স্টান্সআমট এ সবাই চলে গেল সেই সাথে কোম্পানিকে আসিফ ইকবাল ভুঁইয়া ভাই আবার কল দিয়ে আসতে বললেন। শুরু হলো এই দেশের কাগজপত্রজনিত জটিলতার আরেক যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায়। কোনভাবেই ডেস্ক এ বসা ম্যাডাম আমাদের দেয়া কাগজ পত্রে সন্তুষ্ট নয়-পাসপোর্ট যে আসল তার প্রমাণ নিয়ে আসতে হবে দুতাবাস থেকে। দুতাবাসে কল দেয়াতে মিস খন্দকার ততখনাৎ কনফার্মেশন পাঠিয়ে দিল ইমেইলে! কপাল…তাতেও হবে না বাড়ির ঠিকানা বাংলাদেশের তা যে আসল তাও লিখে দিতে হবে। হৃদয়বিদারক সার্কাস ছাড়া আর কিছুই না। এই দিকে ঘড়ির কাটা টিক টিক করছে, বিকেল তিনটা বেজে গেলে কেউ আর থাকবে না। আমি বলে দিলাম মিস খন্দকারের উপদেশ শুনে- পাঁচজনের এক জায়গায় থাকার দরকার নেই, দুইজন গেজুন্ডহাইট-আমট এ গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো। ঠিক বিকেল তিনটা বাজার দশ মিনিট আগে সেই মহামান্য ম্যাডাম সার্টিফিকেট ইস্যু করাতে অনুরোধ করা হলো এটি যেন ফেক্স করে পরের অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়; আমাদের লোক অপেক্ষা করছে। সম্ভবত এই জনাবার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এই ভাবেই বিকেল তিনটা বাজার ১-২ মিনিট আগে জার্মান অথরিটির সব কাগজ হাতে এসে গেল। স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলে পাঠানো হলো আমার কাছে যা আমি ফরওয়ার্ড করলাম দূতাবাসে। দূতাবাস থেকে সার্টিফিকেট আমার হাতে আসল আধা ঘন্টারও কম সময়ে। এই কাজগুলো দূতাবাসের আন্তরিকতা ছাড়া একদিনে করা সম্ভব ছিল না।

১০
সবাই ভাবলো কাজ শেষ তবে হাসনাইন, মুস্তাফিজ, হিমেল, আসিফ, আজয় থেকে গেল মরদেহ কিভাবে প্রসেস হচ্ছে দেখবার জন্যে। মুস্তাফিজের ছিল জর তার ওপরে এমন মানসিক চাপ, পরের দিন পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা তার দেওয়া হয়নি। দিনশেষে আপডেট দিলাম সুজন অমুক সময় দেশে থাকবে। সকালে আবার আসল কল- কি অবস্থা? আপু সকালের ফ্লাইটে পাঠানো সম্ভব হয়নি। মাথায় বজ্রাঘাত! সেই সমস্যার সমাধান হলো সন্ধ্যায়। এখন শুরু হলো ঢাকার গ্রুপের সাথে কথা, কে কিভাবে যাবে এম্বুলেন্স এসি ছাড়া কিন্তু এই গরমে কফিন নেয়া যাবে না ইত্যাদি। এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ ভাইকে অনুরোধ করা হলো যাতে এয়ারপোর্ট এ সমস্যা না হয়। ইউসুফ ভাইকে সুজনের বড় ভাই এর নম্বর দেয়ার মুহুর্তের মধ্যে কল দিয়ে খোঁজ নিয়ে ফেলেছেন। ইউসুফ ভাই আমাদের থেকেও সুপার ফাস্ট, আমি জানাবার আগেই উনি কথা বলে ফেলছেন। শেষপর্যন্ত দেশে ল্যান্ড করলো প্লেন, সুজনের দেহ নিয়ে তার ভাই ও বন্ধুরা গেল সুজনের বাড়িতে। bkash এর প্রাপ্ত টাকার কি হবে আপু? হাতে দিয়ে দাও, শেষকৃত্যের খরচ আছে না? এমনভাবেই দিন গেল সন্ধ্যা হল, সুজন চিরবিদায় নিল আমাদের মনে একই প্রশ্ন রেখে “ওরে জীবন এত ছোট কেনেরে”!

সুজনের জন্যে আপনারা
‘হায়! জীবন এত ছোট কেনে’
ভালো থাকো সুজন !!!
জার্মানিতে এক হতভাগ্য তরুণের কথাঃ সুজনের মরদেহ পাঠানোর আপডেট- মঙ্গলবার

 

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

One thought on “পর্দার আড়ালে,সুজনের স্বজন”

Leave a Reply