সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ভ্রমন কাহিনীর সে ফরাসী নগরগুলি, পল্লীকবির নানান দেশের সম্মেলনে গিয়ে নতুন মানুষের সাথে পরিচয় আর তাদের নিয়ে টুক করে কবিতা লিখে ফেলা- এই সবের মাঝে স্বপ্ন দেখতে পার হয়ে গেছে আমার ছেলেবেলা। আমার এক কাকা বলত, তোর্ পায়ে তিল আছে-তোর্ বিদেশ ভ্রমনের কপাল আছে। বিদেশে আসা মানে কেবল কাজই না কিছুটা পৃথিবীও কিছুটা দেখা। যদিও ছোটবেলা কেটেছে বিদেশে, তবে জানার উদ্যেশ্যে দেশ ভ্রমন শুরু হয় ভারত ভ্রমন দিয়ে আর্কিটেকচার এর বন্ধু মহলের সাথে। তবে ঘটা করে দেশের বাইরে ভ্রমনের শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। বঙ্গসন্তান হিসেবে ভ্রমনের লিস্টিটা বাড়াচ্ছি জানার তাগিদে, দেখার তাগিদে। কোনো একসময় বলতাম আমি বড় হয়ে যাই করি না কেন ধনী হতে চাই না-কিনতু এমন কাজ চাই যাতে অনেক জায়গায় ঘুড়ে বেড়াতে পারি। সে যাক, যেই উদ্দ্যেশ্য নিয়ে  এই ভ্রমন নিয়ে লেখা সেই সম্পর্কে কিছু বলা…1

১০-১২ বছর আগেও দেশ ভ্রমন এত সহজ কোনো বিষয় ছিল না। এখন এটা কোনো ব্যাপারই না। তবে কিছু সমস্যা গোড়াতে রয়েই গেছে বলে আমার মনে হয়। অনেক কেই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে আচ্ছা আপনি যে ঘুড়ে-ফিরে আসলেন কিন্তু আপনি আসলে কতটা জেনে শিখে আসলেন, কতটা তাদের জীবনে প্রভাব ফেলে আসলেন এবং তা কি ভালো নাকি খারাপ-এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে দেখেছেন কি? আচ্ছা সেই কথা না হয় বাদই দিলাম কি দেখতে যাচ্ছেন আর কেনইবা যাচ্ছেন জানেন কি? এই সিরিজটি আমাদের বাংলাভাষী ভ্রমনকারীদের জন্যে লেখবার প্রচেষ্টা। কেন কোথায় যাবেন, যাবার পরে কি করা উচিত এবং প্লানই করবেন কিভাবে? এই সব নিয়েই সিরিজের শুরু…যদিও প্রথম লেখা চলে এসেছে ম্যাগাজিনের

জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন – জুন ২০১৬ – ভ্রমণ সংখ্যায়।

তবু জানার কোনো শেষ নাই …

আপনি নানান দেশে ঘুরতে যান কেন? কতটুকু জেনে তারপরে আপনার যাত্রা শুরু করেন? কতটুকুই বা গিয়ে শিখে আসেন?

আমার মতে কিছু কিছু ব্যাপার যাত্রা শুরুর আগে জানা থাকা ভালো-1

  • যে দেশে যাচ্ছেন সেখানকার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ইত্যাদি কিছুটা জেনে যাওয়া উচিত
  • কি ধরনের খাবার ওখানকার বিশেষত্ব
  • মুদ্রা, যানবাহনের মাধ্যম, পোশাক, জরুরি সময়কালীন সাহায্য, আবহাওয়া
  •  কোথায় কোথায় যাবেন এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাপারগুলো মাথায় নেয়া উচিত
  • আপনার গন্তব্যস্থলে কখন পৌছবেন এবং সেখান থেকে থাকবার জায়গায় যাবার উপায় কি, মুদ্রা ভাঙিয়ে নিতে হবে কিনা; কমপক্ষে কত ভাঙালে প্রথম পর্যায়ে কাজ হবে ইত্যাদি

ব্যাগ গোছানোর সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত- 1

  • আবহাওয়া বুঝে জামা-কাপড় নেয়া।
  • অহেতুক বেশি জিনিস নিয়ে ব্যাগ ভারী না করা।
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্র এবং সেনসিটিভ ঔষধ হলে প্রেসক্রিপশন সাথে রাখা।
  • প্লেনে যাত্রা হলে হাতব্যাগে কি নেয়া যায় বা যায় না -সেই বিষয়ে জেনে শুনে ওজন মেপে মেপে নেয়া। লিকুইড বিষয়ক নিয়ম মেনে প্যাকিং করা।
  • ক্যামেরা, মেমরি কার্ড, এক্সট্রা ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যান্ক, ফোন, লাপটপ, চার্জার এই ধরনের জিনিস হ্যান্ড ব্যাগে নিজের কাছে রাখা।
  • টিকেট এর প্রিন্ট নেয়া (যদিও অনেক ক্ষেত্রে এখন মোবাইল থেকে বার কোড দেখানো যায় তবুও…)
  • ওহ ইয়ে মানে বিদেশের মাটিতে পাসপোর্ট আর প্রয়োজনীয় কার্ড সাথে নেয়া

আগমনের পর যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত- 

1

  • ঘড়ির সময়ের সাথে লোকাল সময়টা পাল্টে নেয়া
  • মুদ্রা ভাঙ্গানোর জন্যে যেকোন জায়গায় না গিয়ে প্রথমে অল্প কিছু নিয়ে-বিচার বিবেচনা করে পরে বাকিতা কনভার্ট করে নেয়া
  • একটা মানচিত্র হাতের কাছে রাখা। যদিও স্মার্ট ফোনে আজকাল ডাউনলোড করে নেয়া যায় তবে বিপদের সময় স্মার্ট ফোনটা কেন জানি কাজই করতে চায় না…
  • যেখানে থাকবেন সেখানে লকার থাকলে মূল্যবান জিনিসপত্র রাখা আর বাইরে চলা ফেরার সময় ব্যাগে বা মানিব্যাগে সবকিছু না রেখে গুপ্ত ব্যাগে কোমরের কাছে বা সার্টের নিচে লুকিয়ে রাখাটা সবসময়ই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও বিমানবন্দরে চেক করার আগে দয়া করে বের করে রাখবেন নাহলে অযথা হয়রানি হতে পারে।
  •  যদি বেশি ধারনা না থাকে তাহলে কাছেপিঠে টুরিস্ট ইনফো ব্যুথও ঘুরে আসতে পারেন, হোটেলে বা হোস্টেলেও কিছু তথ্য পেতে পারেন।

একজন পর্যটক হিসেবে আপনার করনীয়- 
1

নতুন একটি জায়গায় ভ্রমনে যাচ্ছেন ভালো কথা তবে কিছু বিষয় বেশিরভাগ মানুষজন অনুসরন করেন না বা করতে চান না বিষয়টি হয়তবা বদলানো উচিত-

  • আপনি ঘুরতে গিয়েছেন যেখানে আপনি কিন্তু বহিরাগত তাই খেয়াল রাখবেন যারা সেখানে থাকে তাদের মূল্যবোধ বা দৈনন্দিন জীবনে যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে।
  • ঘুরতে গিয়েছেন এক বা দুইদিনের জন্যে, জায়গাটি নোংরা করে রেখে আসবেন না।
  • যদি প্রাকৃতিক বৈচিত্র দেখতে যান তবে খেয়াল রাখবেন এমন কিছু না করেন যাতে প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হয় এবং প্রাণীকুলের বিনাশের কারন হয়।
  • কেবলমাত্র নিজের একখানা ছবি তোলার জন্যে এমন কিছু করবেন না যাতে আপনাকে সার্কাসের ক্লাউন মনে হয়।
  • সর্ব শেষে মাথায় রাখা উচিত যে এলাকায় আপনি গিয়েছেন সেই এলাকার যদি কোনো বিশেষ শিল্পকর্ম  থেকে থাকে তা স্মৃতি হিসেবে কেনা এবং বিশেষ খাবার থাকে তবে উচিত চেখে দেখা। এই দুইটি ছাড়া আপনার ভ্রমন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তার থেকেও বড় কথা আপনি লোকাল কমিউনিটিতে, তাদের অর্থনীতিতে কিছুটা অবদান রেখে গেলেন।
  • জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন – জুন ২০১৬ – ভ্রমণ

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

One thought on “বঙ্গ ললনা থেকে মার্কোপোলো ১: সুচনা”

Leave a Reply