লে-২ টা-১ এ তরুণ ও প্রাণবন্ত মোয়াজ্জেম স্যার অ্যাকাউন্টিং ক্লাস নিচ্ছিলেন। তিনি আমাদেরকে ব্যালেন্সশিটে ডেবিট ক্রেডিট এন্ট্রি করার উপায় বর্ণনা করছিলেন। এমন সময় ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু এবং শেষ বেঞ্চে বসা সর্বনিম্ন সিজিপিএধারী বালক জিজ্ঞেস করল, “স্যার, আমি যদি কোন একটা বোরিং সাবজেক্টে কম সময় ব্যয় করে কোনরকমে পাশ করি আর মজার সাবজেক্টে বেশী সময় ইনভেষ্ট করে জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধের সাথে সাথে ভাল গ্রেড পাই, এক্ষেত্রে কোনটা ডেবিট আর কোনটা ক্রেডিট হবে”?

বালকের এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল, অনেকের চোখেমুখে তাচ্ছিল্যের ভাব স্পষ্ট।
স্যার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন, “এই ছেলে, দাঁড়াও”?
ভয়ার্ত চোখে বালকটি বসা অবস্থা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াল।
“তোমার সিজিপিএ কত”? স্যার জিজ্ঞেস করলেন।
“২.৯৭ স্যার, ক্লাসের লাস্ট বয়” নিচু কন্ঠে বালকের জবাব।
আবারো অনেকেই হেসে উঠল।
বালককে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ শেষে স্যার হাসিমুখে বললেন, “তোমাকে দিয়েই হবে”।
“কি হবে স্যার”? আড়ষ্টভাবে বালকের জিজ্ঞাসা।
“ভাল কিছু হবে”।

তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে স্যার বললেন, “আজকে যে ছেলেটির অসাধারণ প্রশ্ন শুনে তোমরা সবাই হাসলে, দেখবে সেই একদিন সবচেয়ে ভাল চাকরিটা পেয়েছে। বাহিরের জগতে সিজি্পি’র চেয়ে আউট নলেজের মুল্য বেশী, কথাটা এই বয়সে তোমাদের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও আসলেই সত্যি। যারা শিক্ষক হবে তাদের জন্য ব্যাপারটা কিছুটা আলাদা”।

স্যারের সেদিনের বাণী সত্যি প্রমাণ করে সেই বালকটি দেশে সবচেয়ে ভাল চাকরিটা পেয়েছিল। আমেরিকায় মাস্টার্স সম্পন্ন করে এখন একটা ভাল কোম্পানীতে খুব ভাল পদে কাজ করছে। সৎভাবে বলতে গেলে, আমাদের মধ্যে ভাল পজিশনের তালিকায় প্রথম দিকে আছে সে।

mm

By Shariat Rahman

আমি বর্তমানে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্সে সায়েন্টিফিক এসিস্ট্যান্ট (Wissenschaftlicher Mitarbeiter) হিসেবে কাজ করছি। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে আইপিইতে ব্যাচেলর আর ২০১২ সালে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্স থেকে বায়োনিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে সোস্যাল মিডিয়া, আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।

One thought on “লাস্ট বয়”

Leave a Reply